প্রত্যন্ত গ্রামে আমার বাড়ি। এখন পেশার কারণে নানা প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয় প্রায় প্রতিদিন। চার দিকেই যেন এখন একটা অস্থিরতা দেখতে পাই। ছোটবেলা থেকেই কষ্টের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছি। আদর্শ-মূল্যবোধ— জীবনে এই শব্দগুলোর গুরুত্ব এক রকম দিতে শিখেছি। কিন্তু এখন বাড়ির গ্রামের খবর পাই, আশপাশের নানা জায়গাতেও দেখতে পাই নীতি-আদর্শের ধারও ধারে না কেউ। আজ এক দলে, তো কাল তিনি আর এক দলে। কাল এক জনের সুনাম করছেন তো পরের দিন তাঁকেই পৃথিবীর সব থেকে খারাপ মানুষ বলে চিহ্নিত করছেন। কীসের জন্য, কেন যে রাজনীতি করছেন—বুঝতে পারি না। এটুকু বোঝা যায় যে, সবটাই যে যার স্বার্থের গণ্ডির মধ্যে বাঁধা। মানুষের জন্য এঁরা কিছু ভাবেন না, ভাবেন শুধু নিজের কথা। তাই মুহূর্তেই দল এবং নিজেকে পাল্টে নিতে তাঁদের অসুবিধে হয় না। আমি এই রাজনীতির অবসান চাই। দাবিও রাখি, এক দলের টিকিটে জিতে আর এক দলে যোগদানের ক্ষেত্রে আরও কড়া আইন আসুক দেশে।
এ বারে লোকসভা নির্বাচন। আমার ছোট্ট গ্রাম থেকে যদি সারা দেশের দিকেই তাকাই—একই চিত্র ফুটে উঠছে সর্বত্র। চার দিকে হানাহানি। এক দলের মানুষ আর এক দলের মানুষকে খুন করছে। এক ধর্মের মানুষ আর এক ধর্মের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। তার পিছনেও রয়েছে সেই রাজনীতি। দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে সব জায়গায়। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে সাংসদ—সকলের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠছে মুহুর্মুুহু। রাজনীতিতে হাতে খড়ি হতেই কেউ লক্ষ লক্ষ টাকা থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠছে। পাঁচ বছরে এক-এক জনের সম্পত্তি বাড়ছে হু হু করে। এক জন মানুষ রাজনৈতিক ভাবে পদাধিকারী হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই টাকা-বাড়ি-গাড়ি-সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠছেন। সেই টাকা কোথা থেকে আসছে তা জেনেও সবাই না বোঝার ভান করে আছে। কেউ নিজের চার দিকে নিরাপত্তা রক্ষী দাঁড় করিয়ে রাখছেন। জনগণের ভোটে জিতে কারও কথা যেন মনে নেই তাঁদের।
বাড়ির পাশ থেকে শুরু করে যে গ্রামেই গিয়েছি, দেখেছি মানুষের কষ্টের সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াই। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরে কয়েকশো টাকা নিয়ে তাঁরা বাড়ি ফেরেন। সেই টাকাতেই সংসার, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা থেকে সব চলে। সে সব মানুষের দিকে কারও খেয়াল থাকে না। তাই মাঝে মাঝে মন খুব ব্যথিত হয়। এমন অবস্থা তো আমরা চাই না। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ চাই না। আসলে নীতিহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতেই এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে। তাই সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই বৃহত্তর গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা বলুক এটাই চাই আমি। মুহূর্তের মধ্যে দল-মন বদলে ফেলা সুবিধাবাদীদের তাঁরা ছুঁড়ে ফেলে দিক আস্তাকুঁড়ে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
লেখক: ভাওয়াইয়া শিল্পী, পুলিশ কর্মী
অনুলিখন: নমিতেশ ঘোষ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy