Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

পরেশ অস্ত্রে পার্থ বধ কোচবিহারে

টানাপড়েন চলছিলই। শেষ অবধি বর্তমান সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে টিকিট দিল না তৃণমূল। দলের কোচবিহার লোকসভা আসনের প্রার্থী হলেন বর্ষীয়ান বাম নেতা পরেশ অধিকারী।

নমিতেশ ঘোষ 
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ০৫:২৭
Share: Save:

টানাপড়েন চলছিলই। শেষ অবধি বর্তমান সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে টিকিট দিল না তৃণমূল। দলের কোচবিহার লোকসভা আসনের প্রার্থী হলেন বর্ষীয়ান বাম নেতা পরেশ অধিকারী। মঙ্গলবার কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি পরেশের নাম ঘোষণার সময়ে পার্থর প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘পার্থ ছোট ছেলে। ওকে এ বারে প্রার্থী করতে পারলাম না। ওকে দলের কাজে লাগাব, যদি ও দলে থাকে।’’

পার্থ নিজে অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি দলের সঙ্গেই আছেন। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার রাজনৈতিক আদর্শ। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কথা ভাবতেই পারি না। দল যা ঠিক মনে করেছে তাই করেছে। আমি দলের সঙ্গেই থাকব।” একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, দলের প্রার্থীর জন্য একশো শতাংশ দেবেন তিনি।

সাংসদের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, পার্থর অনুগামীরা দৃশ্যতই ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন পার্থ। পরে সাংসদ জানান, অনুগামীরা দলের কর্মী। কারও ব্যক্তিগত অনুগামী নয়। তাই দলীয় নেতৃত্ব যা বলবেন, তাঁদেরও সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

কিন্তু কেন পার্থকে টিকিট দিল না দল? তরুণ সাংসদ। আড়াই বছর আগেই লোকসভা উপনির্বাচনে তিনি চার লক্ষের বেশি ভোটে জয়ী হন। দিল্লিতে সংসদে গিয়েও প্রশ্ন-উত্তরে সরব হয়েছেন একাধিকবার। এমনকি, তাঁর মেয়াদকালে বরাদ্দ টাকাও খরচ করতে সমর্থ হয়েছেন। তা হলে কোন অঙ্কে তিনি বাদ?

এর জবাবে একাধিক কারণ উঠে এসেছে। প্রথমত, পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে যুব বনাম মূলের দ্বন্দ্ব অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। পার্থ যুবর জেলা সভাপতি। পঞ্চায়েত ভোটের সময়কার দ্বন্দ্ব তাই দলীয় নেতৃত্ব ভাল ভাবে নেননি বলে মনে করছে দলেরই একটি অংশ। ওই নেতা-কর্মীরা বলছেন, যুব যে মূলের ঊর্ধ্বে নয়, সেটা যুবর রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এসে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রবল দাপট ছিল নিশীথ অধিকারীর। তাঁকেও দল ছেঁটে ফেলেছে। তৃণমূলের ওই নেতা-কর্মীরা বলছেন, নিশীথকে অপসারণের সময়ে পার্থ হয়তো বুঝতে পারেন, পরিস্থিতি কতটা গুরুতর। কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না।

দ্বিতীয়ত, দলের আর একটি অংশের দাবি, এর পিছনে রয়েছে কাকা-ভাইপোর লড়াই। কোচবিহারের রাজনীতিতে কাকা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং ভাইপো পার্থ। কাকার হাত ধরেই এক সময়ে রাজনীতিতে উত্থান ভাইপোর। কিন্তু সাংসদ হওয়ার পরে দু’জনের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হয়। রবীন্দ্রনাথ তো একসময়ে বলে দেন, ‘‘আমি চাই না কেউ আমাকে কাকা বলে ডাকুক।’’ অনেকে আবার বলছেন, যুব বনাম মূলের দ্বন্দ্বটাই দু’জনের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছিল।

পার্থর অনুগামীদের অভিযোগ, এ বারে সেই রবীন্দ্রনাথই কলকাঠি নেড়ে পার্থর টিকিট আটকে দিয়েছেন। যদিও রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘এমন কোনও ব্যাপারই নেই। দলীয় নেতৃত্ব যা ঠিক মনে করেছেন, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’

উল্টো দিকে, পরেশ অধিকারীর পক্ষে সওয়াল করতে নেমে পড়েছেন দলেরই অনেকে। বাম আমলে মেখলিগঞ্জের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক এবং মন্ত্রী পরেশ সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরেই তাঁকে চ্যাংরাবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়। রবীন্দ্রনাথের অনুগামীদের একটি অংশের দাবি, পরেশ তৃণমূলের ভোট তো পাবেনই। বামেদের একটি অংশের ভোট টানতেও সক্ষম হবেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল জেলা নেতার অবশ্য দাবি, “যাঁরা পুরনো, তাঁদের বাদ দিয়ে বাম দল থেকে আসা একজনকে প্রার্থী করা সবাই মেনে নেবে না। এ ছাড়া দিন কয়েক আগে তাঁর মেয়ের চাকরি নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।” পরেশ এই নিয়ে কিছু বলতে চাননি। রবীন্দ্রনাথ বলেন, “পরেশকে দল প্রার্থী করেছে। তিনি লক্ষ লক্ষ ভোটে জিতে রেকর্ড তৈরি করবেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Politics Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy