Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫

প্রকৃত বন্ধু আমি, বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা রাজ্যে ৩৫ লক্ষ ঘর বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কখনও কখনও অভিযোগ পাই, ঘরের জন্য টাকা চাওয়া হচ্ছে। এটা উচিত নয়।” রঙ না দেখে সব দলের জন প্রতিনিধিকেই বিষয়টি দেখতে বলেন তিনি। 

মুহূর্ত: শনিবার হাসিমারায় জনসভার মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার। ছবি: নারায়ণ দে

মুহূর্ত: শনিবার হাসিমারায় জনসভার মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার। ছবি: নারায়ণ দে

পার্থ চক্রবর্তী ও রাজু সাহা
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৩৮
Share: Save:

চা বাগানে অনেক দিন ধরেই ক্ষোভের গন্ধ। তাতেই ভোট বেড়েছে বিজেপির। গত বিধানসভায় মাদারিহাট কেন্দ্রটি জিতে নিয়েছে তারা। ভাল ফল করেছে এক বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটেও। এই ভূমিক্ষয় সামাল দিতে এ দিন চা বলয়ে দু’টি সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি অসম সীমানা লাগোয়া বারবিশায়, অন্যটি হাসিমারায়। দু’টি জায়গা থেকেই তিনি বার্তা দেন, বিজেপি নয়, তিনিই চা বাগানের প্রকৃত বন্ধু। অভিযোগ আনেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েও কোনও চা বাগান খোলেননি।

কিন্তু একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত মেনে নেন, তৃণমূলের দিক থেকেই কিছু সমস্যা রয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও পুরসভার কাউন্সিলরের কাজে যে তিনি খুশি নন, সেটাও বুঝিয়ে দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা রাজ্যে ৩৫ লক্ষ ঘর বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কখনও কখনও অভিযোগ পাই, ঘরের জন্য টাকা চাওয়া হচ্ছে। এটা উচিত নয়।” রঙ না দেখে সব দলের জন প্রতিনিধিকেই বিষয়টি দেখতে বলেন তিনি।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কি এই বার্তা দিতে দেরি হয়ে গেল? এমন আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলেরই একটি মহলে। তাদের বক্তব্য, এই কথাগুলো কয়েক মাস আগে বলে কড়া ব্যবস্থা নিলে আরও ভাল ফল পাওয়া যেত।

শনিবার আলিপুরদুয়ার জেলায় নির্বাচনী জনসভায় চা শ্রমিকদের মন জয়ের চেষ্টায় নামলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন প্রথমে বারবিশা ও তার পর হাসিমারায় জনসভা করেন তিনি। দু’টি জনসভাতেই মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে বারবার উঠে আসে চা বাগানের কথা। জমির পাট্টা ও ন্যূনতম মজুরি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসছেন চা শ্রমিকরা। সেই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বহু দিনের এই সমস্যা দূর করতে এর মধ্যেই একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা সেই কমিটির পরামর্শ নেব।” একই ভাবে মজুরি নিয়েও একটি কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। যে কমিটি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি দেখছে বলে জানান তিনি৷ সেই সঙ্গে বলেন, “আমরা ক্ষমতায় আসার পর চা শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে ১৭৬ টাকা হয়েছে। আমরা চা বাগানের জন্য একশো কোটি টাকার একটা প্যাকেজও দিয়েছি। বন্ধ বাগানের শ্রমিকরা প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে দু’টাকা কেজি দরে চাল-ডাল তো রয়েইছে।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চা বাগান এলাকায় ৪৬টি রেশন দোকানও খোলা হয়েছে।

বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করতেও ছাড়েননি মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে মোদী নিজেকে চাওয়ালা বলতেন। অথচ, চায়ের কথাই ভুলে গিয়েছেন তিনি। সাতটা বাগান খোলার কথা বলে মাদারিহাটে ভোট নিলেন। আর তার পরই পালিয়ে গেলেন!’’

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় ছিলেন বিজেপির আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী জন বার্লাও। মমতা বলেন, “বিমল গুরুংদের মতো জন বার্লাও এখানে আগুন জ্বালিয়েছিলেন। দাঙ্গা করেছেন। পাহাড় আর তরাই-ডুয়ার্সকে ভাগ করতে চেয়েছিলেন। অথচ, বিজেপি কিনা সেই দাঙ্গাবাজকেই প্রার্থী করেছে। আমরা এখানে আর আগুন জ্বালাতে দেব না।”

তিনিই যে ভোটপ্রার্থী, সে কথা তুলে ধরতে গিয়ে মমতা বলেন, “সাংসদ, বিধায়ক সবাইকে ভুলে যান। মনে রাখবেন, আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি। আমি আপনাদের জন্য কাজ করব।” আবার প্রার্থী দশরথ তিরকের প্রতি বলেন, “এর পর আরও ভাল করে কাজ করতে হবে। এখানে বেশি সময় দিতে হবে।”

বিজেপি অবশ্য মমতার সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যতই দাবি করুন না কেন, তার সরকার যে চা শ্রমিকদের জন্য কিছু করেনি, সেটা তৃণমূল নেতারা বাগানে বাগানে ভোট চাইতে গিয়েই বুঝতে পারছেন৷ আর তাঁর দলের মতো মুখ্যমন্ত্রী নিজেও যে চা শ্রমিক নেতা জন বার্লাকে ভয় পেয়ে গিয়েছেন সেটাও আজ প্রমাণ হল৷ সেজন্যই বারবার আমাদের প্রার্থীর নাম বলে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 TMC Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy