কোথাও রাস্তায় গোড়ালি পর্যন্ত কাদা। হাঁটার জায়গা নেই। কোথাও গায়ের ‘উপরে’ এসে পড়ে রিকশা, টোটো। তার মধ্যে দাঁড়িয়েই বাজার করতে হয় বাসিন্দাদের। বর্ষায় দুর্ভোগ আরও বাড়ে। শিলিগুড়ির বাজারগুলিতে সুষ্ঠু পরিকাঠামো ‘না-থাকায়’ বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চলছেই। অভিযোগ, বেশিরভাগ বাজারে শৌচাগার বা পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতাকে সমস্যায় পড়তে হয়। পার্কিং-এর জায়গা না থাকায় বাজারে গিয়ে কোথায় মোটর বাইক, সাইকেল রাখা যাবে— তা নিয়েও চিন্তায় পড়েন অনেকেই।
আগে ১৬টি বাজার ছিল শিলিগুড়ি পুরসভার নিয়ন্ত্রণে। সম্প্রতি ব্যবসায়ী সমিতিগুলির সঙ্গে কথা বলে আরও ১৭টি বাজার মাস আটেক আগে পুরসভা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এই ৩৩টি বাজারের ব্যবসায়ীদের থেকে দৈনিক ৬ টাকা ‘টোল’ নেন পুরসভাৈ কর্তৃপক্ষ। সে জন্য ঠিকাদার সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়। কিন্তু তার বিনিময়ে সাফাই-সহ অন্য পরিষেবা ঠিকমতো মেলে না বলে অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেয়র পারিষদ রামভজন মাহাতো অবশ্য বলেন, ‘‘বাজারগুলির পরিকাঠামো ধীরে ধীরে তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি ফুলেশ্বরী মাছ বাজার সংস্কার করা হয়েছে। তা ছাড়া, বাজার কমিটিগুলির সঙ্গে কথা বলে সাফাই পরিষেবায় জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ বিরোধী দলনেতা অমিত জৈন বলেন, ‘‘বাজারের পরিকাঠামো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেই। ব্যবসায়ীদের কষ্টের মধ্যে কারবার চালাতে হয়। ক্রেতাদেরও দুর্ভোগ হয়।’’
বিধান মার্কেট, ক্ষুদিরামপল্লি বাজারের মধ্যে দিয়েই যাতায়াতের রাস্তা।মাঝেমধ্যে টোটো, স্কুটিও চলে ওই রাস্তায়। তাতে ক্রেতাদেরও সমস্যা হয়। দোকানের ছাউনি নেই, পানীয় জলেরও কিছু সমস্যা রয়েছে বলে দাবি গৌরাঙ্গ ঘোষ, অজিত বসাকদের মতো ব্যবসায়ীদের। চম্পাসারি মোড় লাগোয়া নিবেদিতা রোডের ধারে ‘জবরদখল’ করে বসে থাকার অভিযোগে বাজারের দোকানগুলিকে সম্প্রতি তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন ফুটপাথের উপরে পসরা সাজিয়ে চলছে কেনাবেচা। বাজারের সম্পাদক রাম সাহা বলেন, ‘‘পুরসভা কর্তৃপক্ষ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে বলছেন। কী হবে পরিষ্কার নয়।’’
চম্পাসারি মোড় এসজেডিএ মার্কেট কমপ্লেক্সের সম্পাদক বাপি সাহার অভিযোগ, বছর কুড়ি ধরে মার্কেট কমপ্লেক্সের ছয়টি শেডঘরের কাজ শেষ করা হয়নি। তিনটি শেডঘর চালু করা হয়। ভূমিকম্পের পরে সেই বাজারগুলি বিপজ্জনক হয়ে পড়লে বাইরে বসেই কারবার চালান ব্যবসায়ীরা। বাজারের শৌচাগার নিয়েও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, শৌচাগারে নেশার আসর বসে। সেখানে
কেউ যান না। অন্য বাজারগুলির একাংশ নিয়েও এমন নানা অভিযোগ রয়েছে। রেলের জায়গায় বাজারগুলির পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’। অভিযোগ, সেখানে কার্যত কোনও পরিকাঠামো নেই। রেলের তরফেও তা নিয়ে কেউ কিছু বলতে চাননি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)