Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Rail Accident

Bikaner Express derailed: দাদা সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে, বিশাল ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট! সুব্রতর ফোনে মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল

একটু ধাতস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করি, কী বলছিস সুব্রত, কী হয়েছে? ও বলে, ‘‘দাদা স্টেশনের একটু আগে একটা ট্রেন উল্টে গেছে। জানি না ভিতরে কত জন আছে।’’

দোমহনির দুর্ঘটনাস্থল।

দোমহনির দুর্ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক রায়
কৌশিক রায়
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২২ ২০:৫০
Share: Save:

উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলে বছরের এই সময় বেশ ভাল ঠান্ডা। কুয়াশার প্রকোপও খুব। তখন বিকেল পাঁচটা মতো হবে। বাড়ির সামনের মাঠটাও যেন খানিক আবছা হয়ে এসেছে। আচমকাই মোবাইলটা বেজে উঠল। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি সুব্রত। সুব্রত রায়। দোমহনি এলাকার বাসিন্দা। আমাদের বহু দিনের পরিচিত। কিন্তু সুব্রত কেন ফোন করছে? এই ভাবতে ভাবতেই ফোন ধরি।

ও পার থেকে প্রায় চিৎকার করে সুব্রত বলে, ‘‘দাদা, সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। বিশাল ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট।’’ উত্তেজনায় প্রায় কিছুই বলতে পারছে না সুব্রত। একটু ধাতস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করি, কী বলছিস সুব্রত, কী হয়েছে? ও বলে, ‘‘দাদা স্টেশনের একটু আগে একটা ট্রেন উল্টে গেছে। জানি না ভিতরে কত জন আছে।’’

শুনে তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। কাউকে ডাকার সুযোগ পাইনি। নিজের সিকিউরিটির লোকেদের বলি, সঙ্গে চলুন, দোমহনিতে অ্যাক্সিডেন্ট!

আর কিছু শুনিনি। সুব্রতকে ফোন রাখতে বলে দৌড়োই গাড়ির দিকে। ভাগ্যিস ড্রাইভার সাহেব বসেছিলেন স্টিয়ারিংয়ে। আমি সামনে। পিছনে নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে গাড়ি ছুট লাগায় দোমহনির দিকে।

আমার বাড়ি থেকে দুর্ঘটনাস্থল প্রায় ১৩ কিলোমিটার। রুদ্ধশ্বাসে ময়নাগুড়ি রোড দিয়ে যাচ্ছি, দূরে দেখলাম, প্রায় আকাশে উঠে আছে ট্রেনের একটা বগি। তখন পরের অবস্থা ভাবার মত সময়, সুযোগ কিছুই নেই। ওই একটা ছবিই মনে গেঁথে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যা দেখলাম, তা জীবনে দেখতে হবে ভাবিনি। ট্রেনের ইঞ্জিনের পরের কামরাগুলো দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। ভিতরে যে মানুষগুলো ছিল, তাঁদের কী অবস্থা? গাড়ি থেকে নেমেই দৌড় লাগাই ও দিকে। পিছন পিছন আমার নিরাপত্তারক্ষীরা। তখন স্থানীয়েরাও হাজির। কেউ চিৎকার করছে, কেউ লোহার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে, কেউ আবার হাউহাউ করে কাঁদছে। আমাকে দেখতে পেয়ে ওঁরা এগিয়ে আসে। সবার মুখেই একটাই কথা, ‘‘দাদা, এটা কী হয়ে গেল!’’

আমি কী উত্তর দেব, ভেবে পাই না! তার পর হেলে পড়া একটা কামরার দরজা ভাঙতে কী চেষ্টাই না করলাম, কিন্তু লোহার দরজা ভাঙব সাধ্য কী।

পালে পালে লোক ছুটে আসছে। গুটিকয় রেলের লোক আর পুলিশ তাদের সামলাবে কী করে। সবাই তো চায় লোকগুলোকে বাঁচাতে। কিন্তু পারবে কী? এ ভাবেই একটা জানালা খুলে ফেলল কয়েক জন। এরই মধ্যে অবশ্য ওখানে চলে এসেছেন আরও অনেকে। প্রশাসনের লোকেরাও আসছেন এক এক করে। সে এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা।

আমার চোখের সামনেই দুটো ডেডবডি উদ্ধার হল। ভিতরে অনেকের চিৎকারও শুনতে পাচ্ছিলাম মনে হল। মৃতদেহের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। আমি আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোয় হাত লাগাই। ভেবেই রেখেছিলাম, যদি গাড়ির সমস্যা হয়, আমার গাড়ি দিয়ে লোকগুলোকে পাঠাব হাসপাতাল।

বিকেল থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যে দৃশ্য দেখলাম, ভুলতে পারব না কোনও দিন। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছি, বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু এই লোকগুলোকে ঠিক না করে তো কিছুই করতে পারব না। একটা সময়ের পর থেকে বগির ভিতর থেকে একের পর এক আহতদের বের করা হচ্ছিল। আমার নিরাপত্তার লোকেরাও কয়েকজনকে বের করল। তাকানো যায় না। শারীরিক ক্ষতের চেয়েও বেশি মানসিক উদ্বেগ। রক্তপাতের চেয়েও বেশি ভয় আর মৃত্যুকে খুব সামনে থেকে দেখার অনুভূতি।

বছরের এই সময় উত্তরবঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি সন্ধে নামে। ঠান্ডাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। লোকগুলোর খাওয়ার ব্যবস্থা করছি সাধ্যমত। রাতটা অন্তত থাকার জন্যও কিছু ব্যবস্থা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পাঁচটি মৃতদেহ বের করা হয়েছে। জানি না, এটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে। আরও কত কোল খালি হবে। প্রার্থনা করছি, এমন দৃশ্য যেন আর কখনও দেখতে না হয়।

লেখক ময়নাগুড়ির বিধায়ক

অন্য বিষয়গুলি:

Rail Accident jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy