প্রতীকী ছবি।
গরু-ছাগলও বিএসএফ বিধিতে ঘরবন্দি।
বালুরঘাটে আত্রেয়ী পাড়ের দক্ষিণ প্রান্তে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা জলঘর পঞ্চায়েতের চকভাতশালা গ্রামের মাঠে গবাদি পশু চড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে গিয়েছে, বলছেন গ্রামবাসীরা। এবং সেটা জারি করেছে বিএসএফ। ফলে দিনরাত বাড়ি ও রাস্তায় পাশে খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হচ্ছে পোষ্য গরু ও ছাগলকে। এতে চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছেন বাসিন্দারা।
কেমন সে সমস্যা? কীসেই বা সমাধান? গ্রামের লোকজন বলছিলেন, কাঁটাতারের বেড়ার ও-পারের মাঠে যেতে এ-দিকে আধার কার্ড জমা রাখতে হয় জওয়ানদের কাছে। কিন্তু গরু-ছাগলের অনুমতি নেই, পাছে বাংলাদেশের দিকে উন্মুক্ত জমি দিয়ে গবাদি পশু ‘পাচার’ হয়ে যায়! তাই গরু-ছাগলের অবাধ ঘোরাফেরার উপরে বসেছে ‘নিষেধাজ্ঞা’।
সম্প্রতি সীমান্ত থেকে ৫০ কিমি দূরত্ব অবধি বিএসএফের এক্তিয়ার বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাতে চকভাতশালার সঙ্গে গোটা জলঘর পঞ্চায়েতের অধিকাংশ বাসিন্দার মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়েছে। কাঁটাতারের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘দেশভাগে কুটুম হারিয়েছি। এখন ইচ্ছে মতো কাঁটাতারে সীমান্ত বেঁধে চাষের জমিগুলিকেই মূল-ভূমি থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের দিকে উন্মুক্ত পড়ে থাকা জমির ধান ঘরে তুলতে বড় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তার উপর সম্প্রতি গরু-ছাগলের পায়ে বেড়ি পড়েছে। নিজের জমিতেও বাড়ির গরু-ছাগলের ঠাঁই নেই।’’
অথচ বরাবর এ সময় ধান কাটার পর জমিতে পড়ে থাকা খড় ও ঘাস-পাতায় গবাদি পশুর পেট ভরে। বিধিনিষেধের জেরে গরু-ছাগলের খাবার জোগাড় করতে হিমশিম তাঁরা।
বিএসএফ কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, জমিতে গরু চরানোর নামে ওপারে পাচার হচ্ছে জেনেই ওই নিয়ম জারি করা হয়েছে।
গোটা এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ায় একটি মাত্র উঁচু দরজা। চাষিদের অভিযোগ, ওই দরজা পেরিয়ে চাষের পরে পাকা ধান কেটে তুলে আনতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। এলাকা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে জমির দূরত্ব এখন কাঁটাতারের গেটের দৌলতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের এলাকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতটা পথ গিয়ে উঁচু গেটের ধাপ পেরিয়ে ধান কেটে আনতে চাষিদের দুর্ভোগ হচ্ছে বলেও তাঁরা আক্ষেপ করেন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ মিটারের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর নিয়ম। কিন্তু চকভাতশালার ক্ষেত্রে সর্বত্র তা মানা হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ প্রকারান্তরে মেনে নেন এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বাদল সরকার। তাঁর বক্তব্য, জমি ঘিরে কাঁটাতারের সমস্যার বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এখনও সুরাহা হয়নি।
আজও শীতের সকালে দূরে কাঁটাতারের দরজা পেরিয়ে বাঁক কাঁধে ন্যুব্জ হয়ে পড়া চাষি পাকা ধানের বোঝা নিয়ে যখন গ্রামে ফেরেন, সে দিকে তাকিয়ে থাকেন প্রবীণ বিশ্বনাথ, বিপিন রায়েরা। নতুন চালের ভাতের ধোঁয়া ওঠার গন্ধও ভাসতে থাকে চরাচর জুড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy