রাত পৌনে ১১টা। তখনও পুরো ঘুমিয়ে পড়েনি গোটা পাড়া। চুপিসারে এসে পুকুরধারের একটি জামগাছে উঠে পড়েছিল চিতাবাঘ। ভোরের আলো ফুটতেই পাড়ারই কয়েক জনের চোখে পড়ে জাম গাছে নিশ্চিন্তে দু’টি ডালের মাঝে আরাম করে বসে আছে সেটি। ব্যস, সেই খবর চাউর হতে একটুও সময় লাগেনি। এলাকায় বাঘ এসেছে, আর তা চাক্ষুষ করবেন না এ আবার হয় নাকি! ভয়ডর দূরে সরিয়ে কচিকাঁচা থেকে বয়স্ক সকলেই বাঘ দেখতে ছুটে আসেন। নীচে বিপুল জটলা, কোলাহল চলছে। তাতে কিন্তু কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না চিতাবাঘের। যাকে ঘিরে এত কাণ্ড সে-ই মগডালে আরামে বসে। আর মাঝেমধ্যেই পাতার ফাঁক দিয়ে ‘দর্শক’দের দেখছিল।
এ কান থেকে ও কান, এ ভাবে এ পাড়া ও পাড়ায় খবর পৌঁছতেই ভিড় আরও বাড়ল। তত ক্ষণে খবর চলে গিয়েছিল পুলিশ এবং বনদফতরের কাছে। তারা এসে দেখে বাঘ দেখার ভিড়ে গমগম করছে এলাকা। যে বাড়ির পিছনের পুকুরধারের জাম গাছে বসেছিল বাঘটি তার চারপাশে যেন একটা চক্রব্যুহ তৈরি করে ফেলেছিলেন এলাকার মানুষ। বাঘ দেখার আনন্দে মন থেকে ভয় সরালেও পুলিশ এবং বন দফতরের আধিকারিকরা কিন্তু এই পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কিতই হয়েছিলেন। কেননা বাঘ যে কোনও মুহূর্তে গাছ থেকে নেমে আসতে পারে, তাতে বাঘেরও যেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তেমনই আহত হওয়ার অনেক সম্ভাবনা ছিল বাঘ দেখতে আসা মানুষগুলির। তার মধ্যে এলাকাটি আবার ঘনবসিতপূর্ণ।
আরও পড়ুন:
বন্যপ্রাণী স্কোয়াডের কর্মীরা পৌঁছে বাঘ ধরার জন্য জাল পাতেন। অত্যুৎসাহীদের ভিড় সরাতে শেষমেশ পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। ঘটনাস্থলে ট্যাঙ্কুইলাইজার নিয়ে যায় একটি দল। বাঘটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চলছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর। প্রশাসনের তরফে ১৪৪ ধারা জারি করে বাঘ ধরার কাজ চলছে। বাঘটিকে নানা ভাবে গাছ থেকে নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বার দুয়েক ঘুমপাড়ানি গুলি চালানো হয়। কিন্তু সেগুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারণে দৃশ্যমানতাও কমেছে। ফলে বাঘ ধরতে অনেকটাই বেগ পেতে হচ্ছে বন দফতরের কর্মীদের।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণী স্কোয়াডের কর্মী, বন দফতরের আধিকারিকরা বাঘ ধরার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।