পুলিশের সামনেই ‘জমি মাফিয়াদের’ হুঁশিয়ারির মুখে পড়লেন বিডিও। অভিযোগ, নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন তিনি। অবশেষে শুক্রবার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালেন শিলিগুড়ি মহকুমার খড়িবাড়ি ব্লকের বিডিও দীপ্তি সাউ। বিডিওই নিরাপত্তা হীনতায় ভুগলে এলাকার সাধারণ মানুষের কী হবে, প্রশ্ন বিরোধীদের। বিজেপির তরফে মহকুমা জুড়ে জমি মাফিয়াদের দাপটের অভিযোগ তেলা হয়েছে।
খড়িবাড়ির বিডিও বলেন, ‘‘জমি মাফিয়ারা ঘিরে ধরে নানা ভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। আবাস উপভোক্তাদের জন্য সরকারি জমি দিতে গিয়ে বাধা দিয়েছেন কয়েকজন। আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশ এবং ভূমি সংস্কার দফতরকে জানানো হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, রেলের জমিতে বসবাসের কারণে খড়িবাড়ির ৮০ জনের বেশি উপভোক্তা আবাস যোজনার সুবিধা পাননি। তাদের সরকারি জমিতে পাট্টা দিয়ে প্রকল্পের সুবিধা দিতে চাইছে প্রশাসন। সে জন্য খড়িবাড়ির আন্ধারুজোতের সরকারি জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উপভোক্তাদের নিয়ে সেখানে বিডিও, ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং পুলিশের দু’জন কনস্টেবল যান।
উপভোক্তাদের জমির দখল দেওয়ার সময় কয়েকজন বাঁধা দেন বলে অভিযোগ। তারা নিজেদের জমি বলে দাবি করে বিডিওকে ঘিরে ধরেন। অভিযোগ, পুলিশ দুজন সেই সময় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। আগেই অবশ্য ভূমি সংস্কার আধিকারিক এলাকা থেকে চলে গিয়েছিলেন। পুলিশের সামনেই বিডিওকে নানা ভাবে ধমক দেওয়ার অভিযোগও উঠলে তিনি থানায় ফোন করেন। ভূমি সংস্কার আধিকারিককে ডেকে আবারও এলাকায় আনেন। বিডিও তাদের চিনতে না পারলেও পরে দুই জনের নাম জানতে পেরেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
খড়িবাড়ি ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক প্রতিমা সুব্বা বলেন, ‘‘আমি সেখানেই ছিলাম। আমরা সরকারি জমি বলেই জানি। কিন্তু কয়েকজন দখল করে রেখেছে।’’ বিডিও নিরাপত্তা হীনতার অভিযোগকে সামনে এনে আসরে নেমেছে বিজেপি। শুধু খড়িবাড়ি নয়, মহকুমা জুড়ে সরকারি জমি দখলে শাসক নেতাদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ দলের। ফাঁসিদেওয়া বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক দুর্গা মুর্মু বলেন, ‘‘শাসক নেতাদের মদত না থাকলে জমি মাফিয়াদের এতটা বাড়বাড়ন্ত হতে পারে না।’’
যদিও খড়িবাড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা মহকুমা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ কিশোরীমোহন সিংহ বলেন, ‘‘প্রশাসন আইনি ব্যবস্থা নেবে। দলের কেউ যুক্ত রয়েছে বলে জানা নেই। অভিযোগ পেলে দলীয় স্তরে জানানো হবে।’’
অভিযোগ, অনেক সময় জমি দখলের ক্ষেত্রে ভূমি সংস্কার দফতরের সরকারি অফিসারদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। খড়িবাড়ির খবর পেয়ে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ নিয়েছেন দার্জিলিং জেলা ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং জেলা প্রশাসন। ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)