Advertisement
E-Paper

ছুটি বলে বেঁচেছি, বলছেন শ্রমিকরা

বাড়ির ফোন ধরে বিহারের সমস্তিপুরের ধীরজ কুমার বললেন, ‘‘ভাল আছি। ভয় নেই। চিন্তা করো না।”

সেতুভঙ্গ: ফরাক্কায় ভেঙে পড়া সেতুটি (বাঁ দিকে)। মৃত ইঞ্জিনিয়ার সচিনের বাবা উদয়বীর। নিজস্ব চিত্র

সেতুভঙ্গ: ফরাক্কায় ভেঙে পড়া সেতুটি (বাঁ দিকে)। মৃত ইঞ্জিনিয়ার সচিনের বাবা উদয়বীর। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:০২
Share
Save

সোমবার ভোরের আলো তখন সবে ফুটেছে। নির্মীয়মাণ দ্বিতীয় ফরাক্কা সেতুর ভেঙে পড়া অংশ থেকে ১০০ মিটার দূরে বাঁশ, চাটাইয়ে তৈরি সারি সারি ঝুপড়িতে একের পর এক বাজতে শুরু করল মোবাইল ফোনের রিংটোন। ওপারে একরাশ উদ্বেগে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ থেকে সেতুর কাছে আসা শ্রমিকদের পরিজনেরা।

বাড়ির ফোন ধরে বিহারের সমস্তিপুরের ধীরজ কুমার বললেন, ‘‘ভাল আছি। ভয় নেই। চিন্তা করো না।” ফোন কেটেই তিনি বলেন, ‘‘পরিবারের লোকেদের চিন্তা কাটাতে এমন মিথ্যা কথা বলতেই হবে।’’ কেন?

তাঁর কথায়, ‘‘রবিবার ছুটির দিন থাকায় সেতুর কাজে যাইনি। অন্য কোনও দিন ওই দুর্ঘটনা হলে হয়তো স্ল্যাবের তলায় চাপা পড়তে হত। কারণ ওখানেই তো আমাদের কাজ করতে হয়।’’

নির্মাণ শ্রমিক লাল বাহাদুর বলেন, ‘‘ছুটির দিন। সহকর্মীদের সঙ্গে ঘরে ছিলাম। প্রচণ্ড শব্দ শুনে বেরিয়ে দেখি সেতুর একাংশ ভেঙে পড়েছে। সহকর্মীদের কেউ চাপা পড়েছেন কিনা দেখতে ছুটে যাই ঘটনাস্থলে।’’

শুধু ওই সব ঝুপড়ির বাসিন্দারাই নন, সেতু ভেঙে পড়ার শব্দে চমকে উঠেছিলেন বৈষ্ণবনগরের নিউ খেজুরিয়া কলোনি, ভাঙাটোলা, নতুন টোলা গ্রামের মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠায় অনেকে মনে করেন ভূমিকম্প হচ্ছে। আতঙ্ক ছড়ায় গোটা এলাকায়। অনেকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। পরে গ্রামবাসীরা সেতুর অংশ ভেঙে পড়ার খবর পান।

স্থানীয় বাসিন্দা তোলা হালদার, শিবু হালদারের অভিযোগ, ‘‘গ্রামবাসীরা ভিড় জমাতেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নির্মাণস্থলের আলোগুলি নিভিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা পৌঁছলে ঘণ্টাখানেক পরে ফের আলো জ্বলে এলাকায়।’’

ওই কাজের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার ম্যানেজার ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী বলেন, ‘‘যান্ত্রিক গোলযোগেই আলো নিভে গিয়েছিল। পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে আলোর ব্যবস্থা করা হয়।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিপর্যয়ের পরে কার্যত রাত জেগে ছিলেন আশপাশের গ্রামগুলির অনেক বাসিন্দাই। ভিড় জমে গঙ্গার তীরে। মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনাস্থলে যান মালদহ জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা স্থানীয় বাসিন্দা চন্দনা হালদার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘সেতু তৈরির কাজে গলদ রয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে কাজ করছে ঠিকাদার সংস্থা।’’

ওই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা সীতেশচন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের চোখের সামনেই প্রথম ফরাক্কা সেতু তৈরি হয়েছে। সেই সময় বড় বড় স্তম্ভ তৈরি করে সেতু তৈরি করা হয়েছিল। নির্মীয়মাণ সেতুর স্তম্ভগুলি দেখে মনে হচ্ছে যেন গ্রামের রাস্তার কালভার্টের জন্য সে সব তৈরি করা হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখানে মূলত বেলেমাটি। সে সব ভেবেই সেতুর কাজ করা উচিত।’’

যদিও নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার সংস্থা এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

Labourers Farakka bridge

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}