সংসার চালাতে স্কুল ছেড়ে ঢুকতে হয়েছে কাজে।
শিশু দিবসে তাঁর বিধানসভা এলাকাতেও হদিস মিলল শিশুশ্রমের। যা বন্ধের দায়িত্ব তাঁরই দফতরের। কিন্তু প্রথমে তা মানতেই রাজি ছিলেন না রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা গোয়ালপোখরের বিধায়ক গোলাম রব্বানি। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ‘‘কোথায় শিশু শ্রমিক? কেউ দেখেছে না কি?’’
শিশুদের দিয়ে কাজ করালে হরেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি মোটা টাকা জরিমানার নিদান রয়েছে এ রাজ্যেও। সেই নজরদারি ও প্রচারের দায়িত্বে রাজ্যের শ্রম দফতর।
শিশু দিবসে সেই দফতরের প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানির এলাকা গোয়ালপোখরেই আবর্জনার স্তূপে কাগজকুড়োনি থেকে খাবারের দোকানে বাসন ধুতে দেখা গেল কয়েক জন নাবালককে। গোয়ালপোখর ও আশপাশের বিভিন্ন গ্যারাজেও ছবিটা একই। সেখানেও কালিঝুলি মেখে কাজে ব্যস্ত থাকল জনা কয়েক নাবালক।
গোলাম রব্বানি অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। এ নিয়ে প্রশ্নে প্রথমে তিনি বলেন, ‘‘কোথায় শিশু শ্রমিক? জানি না তো। কেউ দেখেছে না কি?’’ তাঁর দফতরই অভিযান চালিয়ে গত কয়েক মাসে কয়েক জন শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করেছে, এই তথ্য শোনার পরে মন্ত্রীর আশ্বাস— ‘‘শিশুশ্রম রুখতে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’
শ্রম দফতরের দাবি, শিশুশ্রম রুখতে অভিযান চলে। হয় প্রচারও। কিন্তু জেলাবাসীর একাংশের বক্তব্য, এ সবে শিশুশ্রম যে বন্ধ করা যায়নি তা হামেশাই চোখে পড়ে।
এক ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারের দাবি, ‘‘রোজগার ও কাজ শিখতে বাড়ির লোকেরাই আমাদের কাছে সন্তানদের পাঠিয়ে দেয়। ওদের দিয়ে হালকা কাজই করাই।’’
শিশুশ্রম রোধে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে না কেন? জেলার শ্রম দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলার ন’টি ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় দফতরের পরিদর্শক, আধিকারিক ও কর্মীরা নিয়মিত অভিযান চালান। ১৮ বছরের কমবয়সী কাউকে কাজে না রাখতে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে।’’ শ্রম দফতরের আধিকারিক শেখ নৌশাদ আলমের দাবি, শিশুশ্রম বন্ধ করতে রুটিন অভিযান চলে। উদ্ধার হওয়া শিশু শ্রমিকদের স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়। জরিমান করা হয় অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের। তাঁর কথায়, ‘‘পুরোপুরি না হলেও আগের তুলনায় শিশু শ্রমিক অনেক কমেছে।’’
প্রশাসনের কর্তারা এমন বললেও, শিশু দিবসের কথা জানেই না রবি, মাসুম, কিরণ, মুসকান। এ দিন তা-ই তাদের কাটল হোটেল- রেস্তোরাঁয় এঁটো বাসন মেজে, কালিমাখা গ্যারাজে, ইটভাটার হাড়ভাঙা খাটুনিতে।
এ দিন গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়া শহরে বাজারে নানা খাবারের দোকানে কাজের ফাঁকে বছর বারোর একটি ছেলে বলল, ‘‘অভাবের সংসার। সে জন্যই কাজ করছি। টাকা না পেলে ঘরের লোক যে খেতেই পারবে না।’’
পেটের টানে শিশু দিবসের নানা অনুষ্ঠান থেকে অনেক দূরে থেকে গেল এমন অনেকেই। যাদের জন্যই মূলত শিশু দিবসের ভাবনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy