প্রাণ বাঁচাতে পুলিশকর্মীরা যে বাড়িতে আশ্রয় নেন ও যেখানে আক্রান্ত হন সেখানে পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন ও বাড়ির সার্বিক পরিস্থিতি ঘুরে দেখছেন পুলিশের ১০ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট রাকেশ সিংহ। নিজস্ব চিত্র
কালিয়াগঞ্জ থানা-কাণ্ডে এখনও আতঙ্ক কাটেনি পুলিশ কর্মীদের। তাঁদের মধ্যে অনেকেই একান্ত আলাপচারিতায় জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। আক্রান্ত এক পুলিশকর্মী বলেন, “ঘটনার দিন থানায় পর্যাপ্ত পুলিশ কর্মীও মোতায়েন করা হয়নি। ফলে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি।” মঙ্গলবার থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ কর্মীদের মারধরের অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে তিন জন বিহারের বাসিন্দা বলে পুলিশের দাবি। দু’জন আহত পুলিশ কর্মী রায়গঞ্জ মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।
রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের এডিজি অজয় কুমার বলেন, “পুরো ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। বিনা অনুমতিতে আন্দোলনের নামে পরিকল্পনা করে থানায় ও পুলিশের উপরে হামলা চালানো হয়েছে। অপরাধীদের ছাড়া হবে না।”
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কয়েকদিন আগে পুলিশের উপরে হামলা চলাকালীন নাবালিকার দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে চার পুলিশ কর্মীকে ‘সাসপেন্ড’ হতে হল। এ বারে থানা বাঁচাতে গিয়ে পুলিশ কর্মীদের মার খেতে হল। এ রকম চলতে থাকলে, পুলিশের কাজ করাই তো মুশকিল।” এ দিন ওই থানার সাব ইন্সপেক্টর নেফাজুল হক বলেন, “থানা চত্বরে আমার সরকারি আবাসনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্ত্রী, মেয়ে ও নাতি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। পুলিশ কর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকেদের আতঙ্ক কাটছে না।’’ রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার জানিয়েছেন, সবদিক খতিয়ে দেখে সব অপরাধীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ দিন সামাজিক মাধ্যমে কালিয়াগঞ্জের একটি ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে একটি ঘরে লাঠি দিয়ে পাঁচজন পুলিশ কর্মীকে মারধর করা হচ্ছে বলে দেখা যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার থানায় হামলা চলাকালীন কয়েকজন পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার ‘প্রাণ বাঁচাতে’ থানার পাশের দু’টি বাড়িতে লুকোন। উত্তেজিত জনতা ওই দুই বাড়িতে ঢুকে পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। একটি বাড়ির গৃহকর্তা বলেন, “উন্মত্ত জনতা পুলিশের পিছু ধাওয়া করে ঘুলঘুলি ভেঙে বাড়ির একটি ঘরে ঢুকে পড়ে। পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের রাস্তায় টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁদের পোশাক খুলে ফেলে পেটানো হয়।” এ দিন ওই দুই বাড়িতে রক্তের দাগ, পুলিশের পোশাকের ছেড়া অংশ, পুলিশের জুতো, লাঠি ও ধনুক পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
এ দিন থানা সংলগ্ন চারটি ওয়ার্ডে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। দিনভর শহরে চলে পুলিশের রুটমার্চ। থানা সংলগ্ন একাধিক দোকান এ দিন বন্ধ ছিল। এরই মাঝে, এ দিন রায়গঞ্জ মেডিক্যালে ভর্তি মনোজ বর্মণ নামে কালিয়াগঞ্জের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের এক টোটো চালক দাবি করেন, ওই দিন গোলমালের মাঝে পড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁর বাঁ হাতে গুলি লেগেছে। মেডিক্যালের সুপার প্রিয়ঙ্কর রায় এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “যা বলার পুলিশ বলবে।” পুলিশের দাবি, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই ব্যক্তির মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনি কোনও ভাবে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল পুলিশ কর্মীদেরকে দেখতে হাসপাতালে এসে বলেন, “বিজেপি পরিকল্পনা করে থানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের উপর হামলা করিয়েছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারের পাল্টা দাবি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তৃণমূল লোক ঢুকিয়ে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে। কালিয়াগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শান্তনু দেবগুপ্তের দাবি, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কালিয়াগঞ্জে পুলিশের টহলদারি ও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
গত ২১ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুরের একটি এলাকায় এক নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয়। অধরা দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার-সহ সব অভিযুক্তকে ফাঁসির দাবিতে মঙ্গলবার, কালিয়াগঞ্জ শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে থানায় স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন ‘রাজবংশী, তপসিলি ও আদিবাসী সংগঠনের সমন্বয় কমিটি’র হাজার হাজার মানুষ। অভিযোগ, তখনই আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে থানায় ঢুকে পুলিশ কর্মীদের মারধর, ভাঙচুর-সহ থানার একটি আবাসনে এবং থানা চত্বরে বাজেয়াপ্ত করে রাখা বহু মোটরবাইক ও একটি ছোট গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। ঘটনায় ১৭ জন পুলিশকর্মী আহত হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy