সরকারি নির্দেশিকা, নাগরিক সচেতনতা বা সহমর্মিতা— ফি বছরই থাকে। কিন্তু তবুও কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে শব্দবাজি ও আতশবাজির তাণ্ডবে জেরবার হন গৌড়বঙ্গের তিন জেলার বাসিন্দারা। এ বার করোনা আবহ। বাজি পোড়ানো নিয়ে চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা আগে ছিলই। পরে হাইকোর্ট বাজি বিক্রি ও পোড়ানো নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রচুর বাজি উদ্ধার করে। সব মিলেয়ে এ বারে গৌড়বঙ্গের মালদহ ও দুই দিনাজপুরে কালীপুজোর রাতে বাজি পুড়লই না বললে চলে। তাতে স্বস্তি ফিরেছে চিকিৎসক মহল থেকে শুরু করে পরিবেশপ্রেমী মহলে।
মালদহ
গত বছর কালীপুজোর রাতে মালদহের জেলাসদর ইংরেজবাজার শহরের আকাশ বাজির ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। শ্বাসকষ্ট থাকা রোগীরা চরম সমস্যায় পড়েছিলেন, অনেককে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হতে হয়েছিল। এ বারে একেবারেই বিপরীত চিত্র। শনিবার কালীপুজোর রাতে ইংরেজবাজার শহরে রাত দশটার পরে কিছু শব্দবাজির আওয়াজ পাওয়া গেলেও আর কোনও শব্দ শোনা যায়নি। শুধু তাই নয়, আতশবাজির ধোঁয়ায় ভারী হয়নি আকাশ। ফলে আর পাঁচটা রাতের মতোই স্বাভাবিক ছিল এই শহর। ব্লক সদর ও গ্রামগুলিতেও ছিল একটি ছবি। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, "আদালতের নির্দেশ, সচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি প্রচুর বাজি উদ্ধার করা হয়েছে। তারই সুফল মিলেছে। ছট পুজো-সহ আগামী উৎসবগুলিতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা হবে।"
বালুরঘাট
শহরের মাহিনগর এলাকার ব্যবসায়ী পার্থ মণ্ডল প্রতিবার কালীপুজোর রাতে মেয়ের আবদারে প্রচুর রঙমশলা, তুবড়ি, চরকি ও তারাবাতি কিনে উৎসবে মাতেন। এ বারে আতসবাজি বর্জন করে শনিবারের রাতে পরিবার নিয়ে প্রদীপ, মোমবাতির আলোয় দীপাবলী পালন করেন। পার্থর কথায়, ‘‘মেয়ে এ বারেও আতসবাজির জন্য আবদার করে। কিন্তু আতশবাজির ধোঁয়ায় সকলে খুব কষ্ট পাবে বলে ওকে বোঝালে মেনে নেয়।’’ চকভবানি এলাকার কোভিড জয়ী যুবক সন্তু দাসও নাছোরবান্দা খুদে সন্তানকে বুঝিয়ে মোমবাতি কিনে দেন। এ বারে গোটা বালুরঘাট শহরজুড়েই ছিল ওই উদাহরণ। ফলে এবারে কালীপজোর রাতে বালুরঘাটে শব্দ ও আসতবাজির রমরমা ও পরিচিত ছবি এবারে উধাও। আদালত, পুলিশ, পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে বালুরঘাটে বাজিহীন দীপাবলীর জন্য সচেতন নাগরিকদেরও প্রথম সারিতে রাখছেন শহরের চিকিৎসক পলাশ সাহা ও দেবব্রত ঘোষ। পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, "লাগাতার প্রচার ও পদক্ষেপের ফলে কালীপুজো উপলক্ষে ব্যবসায়ীরাও নতুন করে বাজি তোলেনি। দুর্গাপুজোর সময় তোলা প্রচুর বাজি আটক করা হয়েছিল।"
রায়গঞ্জ
শনিবার রাত ৮টা থেকে রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শব্দবাজির আওয়াজ ভেসে আসতে শোনা যায়। রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত ভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শব্দবাজির আওয়াজ শোনা গিয়েছে। তবে রাত ১০টার পর থেকে সে ভাবে আর শব্দবাজির দাপট ছিল না। বাসিন্দাদের দাবি, রায়গঞ্জ শহর ছাড়া সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতেও এ বছর শব্দবাজির দাপট অনেক কম ছিল। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ইটাহার, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, করণদিঘি, চাকুলিয়া, গোয়ালপোখর, ইসলামপুর ও চোপড়া থানা এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে শব্দবাজি ফাটলেও কোথাও একটানা শব্দবাজি ফাটেনি। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার সুমিত কুমার ও উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, “বাজির কারবার ও ব্যবহার রুখতে পুলিশের একটানা অভিযান ও বাসিন্দাদের সচেতনতার জেরেই এ বছর জেলায় প্রায় বাজিমুক্ত দীপাবলী উৎসব হয়েছে।”
তথ্য সহায়তা: জয়ন্ত সেন, অনুপরতন মোহান্ত ও গৌর আচার্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy