হস্তশিল্পের কারিগর মহিলাদের সঙ্গে জয়শ্রী কর্মকার। নিজস্ব চিত্র
তিনিও এক ‘দিদি’। মালদহের পঞ্চাশোর্ধ্ব জয়শ্রী কর্মকার। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা থেকে হস্তশিল্পী, সবার কাছে তিনি পরিচিত ‘দিদি’ নামেই। তাঁর হাত ধরেই ‘স্বনির্ভর’ হয়েছেন আশা, অঞ্জনা, রুজি খাতুনদের মতো শ’য়ে শ’য়ে মহিলা। তাঁদের কেউ হস্তশিল্পী, কেউ আবার খাবার, পোশাক তৈরি করে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। তাঁদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে রুটি-রুজির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন জয়শ্রী।
জয়শ্রী থেকে তাঁর ‘দিদি’ হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে লম্বা কাহিনি। মালদহের ইংরেজবাজার শহরের বিনয় সরকার রোডে জগদ্ধাত্রীটোলা লেনে বাড়ি জয়শ্রীর। তাঁর স্বামী বিদ্যুৎ দাস বাড়িতে মেকানিকের কাজ করেন। তাঁদের সন্তান নেই। তবে, তাতে আক্ষেপ নেই জয়শ্রীর। তিনি বলেন, “নিজের সন্তান নেই ঠিকই। তবে এখন আমার প্রচুর সন্তান। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা, হস্তশিল্পের মেয়েরাই এখন আমার সন্তান।”
ইংরেজবাজার শহরেই তাঁর বাপেরবাড়ি। মালদহ মহিলা কলেজ থেকে ভূগোলে স্নাতক হন তিনি। কলেজে পড়ার সময় থেকেই সমাজের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৯৭ সালেই মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে সচেতনতার কাজ শুরু করেন। মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার কাজ শুরু করেন। সমকামীদের আন্দোলন সমর্থন করে তাঁদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তবে সমাজসেবার কাজে প্রথমে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবার।
জয়শ্রী বলেন, “মেয়ে হয়ে বাইরে ঘুরে রোদে পুড়ে সমাজসেবা করব তা পরিবার মানতে পারেনি। বাবা আপত্তি করেছিলেন। এখন বাবা আর নেই। তবে তিনি শেষ জীবনে আমার কাজের প্রশংসা করেছিলেন। বাবার প্রশংসাই আমার কাছে আশীর্বাদ।”
১৯৯৭ সালেই গাজলের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সেখানে মহিলাদের হাতের কাজ শেখাতেন। কাঁথার উপরে নকশা, সেলাইয়, পটচিত্র, সবই শেখাতেন। ২০০৩ সালে সংস্থা থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন। নিজেই ২০০৬ সালে তৈরি করেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মহিলাদের স্বনির্ভর করতে কাজ শুরু করেন তিনি। শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র ঘুরে মহিলাদের একসঙ্গে করে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেন। প্রায় ৬০টিরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তিনি তৈরি করেছেন। গোষ্ঠী তৈরির পাশাপাশি, মহিলাদের হস্তশিল্প, সেলাই, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণও দেন তিনি। এখন গোষ্ঠীর মহিলারা নিজেরাই স্বনির্ভর হয়েকাজ করছেন।
এরই পাশাপাশি, আট জন মহিলাকে নিয়ে নিজেরও একটি হস্তশিল্পের মিনি কারখানা চালু করেন জয়শ্রী। এখন সে কারখানায় ১০৮ জন মহিলা কাজ করছেন। করোনা আবহে আট লক্ষ ৬০ হাজার মাস্ক তৈরি করে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁরা। প্রশাসনের তরফে ৪১টি স্কুলের পোশাক তৈরির দায়িত্ব তাঁদের দেওয়া হয়েছে। শহরের বাসিন্দা রুজি খাতুন বলেন, “দিদিই (জয়শ্রী) আমাদের মা। ওঁর জন্যই স্বনির্ভর হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি।”
আশা সরকার বলেন, “আমাদের দিদি, মা দুর্গা সবই জয়শ্রী দি। তাঁর জন্যই আজকে আমরা স্বনির্ভর হতে পেরেছি।” জয়শ্রী বলেন, “কাজের জন্য সর্বত্র ছুটে বেড়াতে হয়। স্বামী সহযোগিতা করেন।” বিদ্যুৎ বলেন, “জয়শ্রী অনেক পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তাতে গর্ব হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy