Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Jalpaiguri

ইংরেজ-আনুগত্যের বাগান-শহরে বজ্রনির্ঘোষ

সুভাষচন্দ্র উত্তরবঙ্গে এসেছিলেন দার্জিলিং মেলে। দেশ ভাগের আগে, দার্জিলিং মেল জলপাইগুড়ি স্টেশন দিয়ে চলাচল করত। দেশ ভাগের পরে, তার পথ বদলায়।

জলপাইগুড়িতে ১৯৩৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু। ফাইল চিত্র।

জলপাইগুড়িতে ১৯৩৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু। ফাইল চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৯
Share: Save:

তখনও বসন্তকাল আসি-আসি করছিল। শোনা যাচ্ছিল ইতস্তত কোকিলের ডাক, পলাশের টুপটাপ ঝরার শব্দ। কিন্তু চার দিক মুখরিত ছিল ক্রমশ ঘনিয়ে আসা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বারুদ-বাতাসে। সে বিশ্বসঙ্কটের সময় তিস্তাপাড়ের এক ছোট্ট শহরে ‘চরম’ এক ঘোষণা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। দুই নদী ঘেরা সে শহর জুড়ে তখন চা বাগান মালিকদের দাপট। দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাগান-বাবুদেরও বসবাস। এবং ছিলেন মালিক-বাবুদের সঙ্গে সম্ভ্রমের দূরত্ব বজায় রেখে চলা চা বাগানের নানা স্তরের কর্মচারীরাও। চাবাগানের মালিক বা বাবু মানেই তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষে জড়িয়ে তখন ইংরেজ-সূত্র। সে ‘সম্পর্ক’ সম্পর্কে প্রতক্ষ্য অভিজ্ঞতাও ছিল বাসিন্দাদের। এমন সাহেবি আনুগত্যে সন্তুষ্ট জলপাইগুড়ি শহরে আচমকা বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের অধিবেশন কেন, প্রশ্ন উঠেছিল সবার মনে।

তার সদুত্তর ইতিহাসে আছে কি না, জানা নেই। তবে ১৯৩৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জলপাইগুড়ি শহরে এসে সুভাষচন্দ্র যে ঘোষণাটি করেছিলেন, তাতে অনেকেরই মনে হয়েছিল, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের অলিন্দে দাঁড়িয়ে শিক্ষক ওটেন সাহেবের মুখের উপর প্রতিবাদ করতে যে নবীন ছাত্রটি দ্বিধামাত্র করেননি, তিনি যে ইংরেজ প্রভুত্বে বশীভূত শহরে এসেও ইংরেজদের দেশছাড়ার চরমসীমা বেঁধে দেবেন, সেটাই ঐতিহাসিক ভাবে স্বাভাবিক। বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি অধিবেশনের মঞ্চ থেকে ‘চরম’ সময়সীমা জানিয়ে সুভাষচন্দ্র ঘোষণা করেছিলেন— ‘‘ছয় মাসের চরমসীমা দেওয়া হল, এর মধ্যে ইংরেজকে ভারত ছাড়তে হবে।’’ ইতিহাসে আরও এক উত্তরবঙ্গ-যোগ— সে দিন জলপাইগুড়ি শহরের মঞ্চে বসেই সুভাষচন্দ্র খবর পান, জাতীয় কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে তিনি ফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

সুভাষচন্দ্র উত্তরবঙ্গে এসেছিলেন দার্জিলিং মেলে। দেশ ভাগের আগে, দার্জিলিং মেল জলপাইগুড়ি স্টেশন দিয়ে চলাচল করত। দেশ ভাগের পরে, তার পথ বদলায়। ঘটনাচক্রে, গত অগস্ট মাস থেকে ফের যাত্রাপথ বাড়িয়ে জলপাইগুড়ি স্টেশনে এসে থামছে দার্জিলিং মেল। পরাধীন ভারতের জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনে নেমেছিলেন সুভাষচন্দ্র। রেল স্টেশনে সেই স্মৃতি সুসংরক্ষিত। শহরের পান্ডাপাড়ার মাঠে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। অধিবেশনের পর থেকে সে পাড়ার নামই হয়ে যায় কংগ্রেস পাড়া।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন প্রধান আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের সঙ্গে নেতাজির যোগাযোগ ঐতিহাসিক। এখানেই তিনি জানতে পারেন, ত্রিপুরী কংগ্রেসে জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। জলপাইগুড়ির সভা থেকেই ইংরেজদের ভারত ছাড়ার বিঘোষণা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন এসেছিলেন তিনি। সেই সভায় ছিলেন শরৎ বসুও।’’

জলপাইগুড়ি শহরে এখন আর চা বাগানের সে রমরমা নেই। তবে সুভাষচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত সে স্টেশন, সে মাঠ আজও ইতিহাস-সাক্ষী হয়ে রয়েছে। প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গ স্মরণ করে তাঁকে। শনিবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri Subhas Chandra Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy