খাবারের খোঁজে বন্যপ্রাণীদের লোকালয়ে চলে আসা নতুন কোনও ঘটনা নয়। বিশেষত ধান পাকার মরসুমে বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা নিয়মিত হাতির হানার মতো ঘটনা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে শুধুমাত্র ধানের মরসুমেই যে লোকালয়ে হাতি ঢোকে, তা নয়। এখন বছরভরই লোকালয়ে হাতির হামলার ঘটনা ঘটছে। শুধু হাতি নয়, অন্য একাধিক বন্যপ্রাণীও বার বার লোকালয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। হাতি বা সেই সব বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের সংঘাতের ঘটনাও মাঝেমধ্যে ঘটছে। হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
অথচ, এমন ঘটনা ক্রমশ বাড়লেও, আমরা এখনও সেই অর্থে সচেতন হতে পারিনি। সকলেই বুঝতে পারছি, বনাঞ্চল ক্রমশ কমে যাচ্ছে। তার পরেও বনাঞ্চল থেকে বৃক্ষছেদন চলছেই। কিন্তু বনাঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীদের সংখ্যা কমছে না। সেই সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। ফলে বনাঞ্চলে তাদের খাদ্যের জোগান কমে যাচ্ছে। যার জেরে হাতি, বাইসনের মতো প্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে। খাবার সংগ্রহের জন্য। সারা বছর ধান পাকার মরসুম থাকে না। তাই সেই মরসুমের বাইরে অন্য সময় কোনও কোনও স্কুলে মিডডে মিলের চাল খাওয়ার জন্য হানা দিচ্ছে হাতিরা। গৃহস্থের বাড়িতেও খাদ্যের লোভে তাদের হানা দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।
তবে শুধুমাত্র খাদ্যের অভাবই নয়। বনাঞ্চলের ভিতরে বন্যপ্রাণীদের পানীয় জলের অভাবও বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে বন দফতরের আধিকারিক থেকে শুরু করে কর্মীদের যতটা তৎপর হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময়ই তেমন দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বনাঞ্চলকে আমাদের বাঁচাতেই হবে। বনাঞ্চলে প্রাণীদের বসবাসের পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। বনাঞ্চলে বৃক্ষছেদন বন্ধ করে ফিরিয়ে আনতে হবে আগের পরিবেশ। যেখানে বন্যপ্রাণীরাও নিজেদের বসবাসের একটা সুরক্ষিত পরিবেশ ফিরে পাবে। সে ক্ষেত্রে লোকালয়ে তাদের হামলার ঘটনা বন্ধ হবে। সেইসঙ্গে বন্ধ হবে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সংঘাতের ঘটনাও। এই কাজটা সহজ নয়। তবে অত্যন্ত জরুরি।
সম্পাদক, আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাব
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)