Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

নোটবন্দির স্মৃতি উস্কে প্রাণ গেল লাইনেই

প্রচণ্ড গরম ও ভিড়ের চাপ সহ্য করতে না পেয়ে তিনি মারা গেলেন। যাঁদের এই ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা দু’লাখ টাকা করে পাবেন বলে নবান্ন থেকে জানানো হয়েছে।

স্বজনহারা: সোলেমান সরকারের মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছেন তাঁর পরিজনরা। ছবি: বাপি মজুমদার

স্বজনহারা: সোলেমান সরকারের মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছেন তাঁর পরিজনরা। ছবি: বাপি মজুমদার

অনুপরতন মোহান্তি
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:১৭
Share: Save:

সাতসকালে বাড়ি থেকে এক রকম না খেয়েই ছুটেছিলেন ডিজিটাল রেশন কার্ড করাতে। চড়া রোদ মাথায় নিয়ে প্রচণ্ড গরমে লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে মাথা ঘুরে পড়ে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ বালুরঘাটের বিডিও অফিস চত্বরে ঘটনাটি ঘটে। মৃতের নাম মন্টু সরকার (৫২)। পেশায় রাজমিস্ত্রি মন্টু বালুরঘাট ব্লকের জলঘর গ্রাম পঞ্চায়েতের পলাশডাঙা এলাকার বাসিন্দা। মৃতের আত্মীয় মোক্তার মণ্ডল জানান, এলাকায় এনআরসি আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ডিজিটাল রেশন কার্ড করাতে হবে বলে মন্টু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রচণ্ড গরম ও ভিড়ের চাপ সহ্য করতে না পেয়ে তিনি মারা গেলেন। যাঁদের এই ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা দু’লাখ টাকা করে পাবেন বলে নবান্ন থেকে জানানো হয়েছে।

ময়নাগুড়ির অন্নদার মতো বালুরঘাটের মন্টুর মৃত্যুও ধাক্কা দিয়েছে কয়েকশো কিলোমিটার দূরের নবান্নে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দুই পরিবারের জন্যই দু’লক্ষ টাকা করে এককালীন অনুদানের কথা ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে সকলকে বলেন, এই রাজ্যে এনআরসি হবে না, তাই এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই।

বালুরঘাটের লোকজন বলছেন, কিন্তু অসমে এনআরসি চালু হওয়ার পরে এবং বিজেপি নেতাদের বারবার এই নিয়ে ঘোষণার পরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সর্বত্র। এ দিন বালুরঘাট ব্লকের বাসিন্দাদের বিডিও অফিসে ডিজিটাল রেশন কার্ড সংশোধন ও নতুন কার্ড করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাড়ি থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে, বালুরঘাটের রঘুনাথপুর এলাকায় বিডিও অফিসে যান মন্টু। কিন্তু ভোর থেকে সেখানে লাইন পড়ে গিয়েছে। মন্টু পৌঁছে দেখেন, সেই লাইনে অপেক্ষা করছেন কয়েকশো মানুষ। এরপর দীর্ঘক্ষণ তাঁকে চড়া রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একদিকে প্রবল গরম, অন্যদিকে ভিড়ের চাপ। দুইয়ের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এক সময়ে লাইন থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লোকজন তাঁকে বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানান হয়। চিকিৎসকদের অনুমান, সানস্ট্রোকে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

এনআরসি আতঙ্কের জেরে খাদ্যসাথী প্রকল্পে ডিজিট্যাল রেশন কার্ডে নাম তোলার জন্য জেলা জুড়ে ব্লক অফিসগুলিতে সকাল থেকে মানুষের ঢল নামছে। তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ প্রবীর রায় অভিযোগ করেন, ‘‘নোটবন্দির সময় যেমন ব্যাঙ্কের সামনে টাকা বদলাতে মানুষের ভিড় হয়েছিল, এ বারেও রেশন কার্ডের জন্য তেমন হুড়োহুড়ি দেখা যাচ্ছে। তার জেরে ওই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল।’’ বিজেপি জেলা সভাপতি শুভেন্দু সরকার পাল্টা দাবি করেন, ‘‘এ দিনের ঘটনার জন্য দায়ী ব্লক প্রশাসন। এনআরসি নিয়ে তৃণমূলই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’’
মৃতের প্রতিবেশীরা জানান, এনআরসি নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। যাঁদের ডিজিটাল রেশনকার্ড নেই, তাঁদের ভয় আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই প্রতিবেশীরা। মন্টুর আত্মীয় নবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘এ নিয়ে মেসোমশাই বেশ চিন্তিত ছিলেন।’’ স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছেন মজিদা বিবি। দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর কী করে চলবে, ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। বালুরঘাটের বিডিও অনুজ শিকদার জানান, তিনি জেলা প্রশাসনিক ভবনে বৈঠকে ছিলেন। খবর পেয়েই ব্লক অফিসে যান। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়ে বিডিও বলেন মৃত ব্যক্তির পরিবারকে সরকারি সব রকম সহায়তা করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Digital Ration Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy