Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
international women's day

‘চাষের কাজ আনন্দ দেয়’

কোচবিহার জেলায় মহিলাদের কৃষক হিসেবে কাজ করার নজির রয়েছে অলিতে-গলিতে। তা সে তামাক চাষ হোক, বা ধান-আলু চাষ।

নিজের খেতে কাজে ব্যস্ত সুভদ্রা বর্মণ। নিজস্ব চিত্র

নিজের খেতে কাজে ব্যস্ত সুভদ্রা বর্মণ। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ ০৭:০৭
Share: Save:

কৃষক পরিবারের মেয়ে। স্বামীও চাষবাসই করতেন। জন্ম ইস্তক তাই জল-মাটি-সার তাঁর কাছে অজানা বিষয় নয়। তবে একেবারে হাতে- কলমে চাষের কাজে নামা স্বামীর সঙ্গে। কোচবিহারের শিকারপুরের বড়দোলার তামাক চাষি সুভদ্রা বর্মণ এখন পরিচিত নাম। সকাল থেকে উঠেই এক বার খেতে দৌড়। এক বার রান্নাঘরে। দিন শেষে অবশ্য মুখে হাসি ফুটে ওঠে। দূরের খেতে বেড়ে ওঠা তামাক গাছগুলির দিকে তাকিয়ে সন্তান স্নেহে বছর পঞ্চাশের সুভদ্রা বলে ওঠেন, ‘‘ওরাই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই ওদের যত্ন তো নিতেই হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আসলে ফসলকে নিজের সন্তানের মতো করেই বড় করতে হয়। পরে, যখন খেত থেকে তুলে আনি তখন কষ্ট হয় একটু। আবার খুশিও হই। আসলে ওই ফসলের জন্যই সারা বছর আমরা দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পাই।’’স্বামী উকিল বর্মণও স্বীকার করেন, ‘‘সুভদ্রা না থাকলে এতটা এগোতে পারতাম না।’’

কোচবিহার জেলায় মহিলাদের কৃষক হিসেবে কাজ করার নজির রয়েছে অলিতে-গলিতে। তা সে তামাক চাষ হোক, বা ধান-আলু চাষ। কৃষক পরিবারের মেয়ে সুভদ্রা পড়াশোনা শেখার সঙ্গেই কৃষিকাজও শিখতে শুরু করেন। পরে, সুভদ্রার বিয়ে হয় শিকারপুরের কৃষক উকিল বর্মণের সঙ্গে। স্বামী রাতদিন ফসলের পিছনে সময় দেন। তা দেখে, স্বামীকে সহযোগিতা করতে সুভদ্রাও নেমে পড়েন মাঠে। তাঁর কথায়, ‘‘কাজ তো জানা ছিলই। এ বার কাজ করতে করতে আরও অনেক জিনিসজানতে পারি। সে ভাবেই এগিয়ে যাই।’’ তিনি জানান, তাঁদের আট বিঘার মতো জমি রয়েছে। তার মধ্যে চার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেন তাঁরা। বাকি জমিতে ধান-পাট চাষ করেন। তামাক চাষ আর পাঁচটি চাষের থেকে কিছুটা আলাদা। বাড়ির উঁচু জমিতে প্রথমে তামাকের চারা তৈরি করতে হয়। বাজার থেকে বীজ কিনে তা রোপণ করা হয়। সেই সময় থেকেই শুরু হয় সুভদ্রার কাজ। নিয়মিত জল দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করে চারা বড় করতে হয়। মাসখানেক পরে, ওই চারা তুলে নির্দিষ্ট জমিতে রোপণ করতে হয়। তামাক খেত তৈরি করা। চারা রোপণ করা, জল ও ওষুধ দেওয়া। প্রতিদিন নজরদারি। তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পরে চারা পরিণত হলে, তা কেটে শুকোতে দিতে হয়। তার পরে তা ঝুলিয়ে রাখতে হয়। সবেতেই প্রধান ভূমিকা সুভদ্রার। এর পরে, তা নিয়ে যাওয়া হয় বাজারে।

সুভদ্রা ও উকিলের দুই সন্তান। ছেলে স্নাতক। মেয়ে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করছে। উকিলের কথায়, ‘‘আমরা পুরোপুরি কৃষিজীবী পরিবার। সুভদ্রা না থাকলে, এতটা এগিয়ে যেতে পারতাম না। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতে পেরে খুব ভাল লাগে।’’

শিকারপুর ফার্মার্স প্রোডিউসার্স কোম্পানির দীপঙ্কর বর্মণ বলেন, ‘‘মহিলারা কৃষিকাজে কতটা পারদর্শী, তা সুভদ্রা বর্মণকে দেখলেই জানা যায়। উনি আমাদের এফপিসির সদস্যা তা ভেবেই ভাল লাগে।’’ সকাল হলেই বাড়ির অদূরে মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকেন সুভদ্রা। বেড়ে ওঠা তামাক গাছগুলি দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, ‘‘চাষের কাজ আমাকে আনন্দ দেয়। এই কাজে আরও এগোতে চাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

international women's day Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy