প্রতীকী ছবি
পেশায় ভ্যানচালক লক্ষ্মী দাস। ভোটার কার্ডে তাঁর বয়স লেখা আছে ৫৬ বছর, কিন্তু আধার কার্ডে বয়স ৬০ বছর। রায়গঞ্জের ছটপড়ুয়া এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী এখন বিভিন্ন সরকারি দফতরে ছুটোছুটি করছেন। তাঁর স্ত্রী লালিয়া বলেন, ‘‘গত দুসপ্তাহ ধরে উনি ডাকঘর, পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে গিয়েও আধার কার্ডে বয়স সংশোধন করাতে পারেননি। এখন আধার কার্ড সংশোধন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়ে সব জায়গা থেকে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য খুবই আতঙ্কে আছেন উনি।’’
ওই এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর বিষ্ণুনারায়ণ দাস। কয়েক বছর আগে তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। বিষ্ণুর কথায়, ‘‘আমাদের জমি-বাড়ির নথি এখনও বাবার নামে রয়েছে। বাবার আসল নাম রাম অবতার দাস। সেই নামেই জমির নথি রয়েছে। অথচ ভোটার কার্ডে বাবার নাম রামবিগার দাস! বাবার মৃত্যু হওয়ার পর প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর ঘুরেও জমির নথিতে নাম বদল করাতে পারিনি। প্রতিটি দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাবার ভোটার কার্ডে নাম ভুল থাকায় জমির নথি অন্য কারও নামে করানো সম্ভব নয়। তাই, কী যে হবে কে জানে!’’
কমলাবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছটপড়ুয়া এলাকায় প্রায় ৮০টি হিন্দিভাষী পরিবার রয়েছে। সব মিলিয়ে বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো। বেশিরভাগের পদবিই দাস। তাঁরা অধিকাংশই দিনমজুরি, ঠিকা শ্রমিক বা ভ্যান রিকশাচালক। কাজের খোঁজে সেই সব পরিবারের পূর্বপূরুষরা কয়েক দশক আগে বিহার থেকে ছটপড়ুয়া এলাকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, ওই এলাকার বেশিরভাগ হিন্দিভাষী বাসিন্দার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ও জমির নথিতে নাম ও পদবি ভুল রয়েছে। অনেকের আবার নথিভেদে অভিভাবকদের নাম ও বসবাসের ঠিকানাও ভুল লেখা রয়েছে। পরিবারের লোকেদের নানা নথিতে ত্রুটি থাকায় কয়েক জন বাসিন্দার ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তৈরির কাজ আটকে রয়েছে। নতুন নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর তাঁরা ডাকঘর, পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে গিয়ে সেই সব নথির ত্রুটি সংশোধন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংশোধন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের আতঙ্ক, নতুন নাগরিক আইনের জেরে যদি নিজ ভূমে পরবাসী হতে হয়! শরণার্থী হয়ে কাটাতে হয় পাঁচ বছর!
বাসন্তি দাস নামে এক গৃহবধূ জানিয়েছেন, তাঁর ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড নেই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে গিয়ে বাপের বাড়ির লোকেদের নথি দেখাচ্ছেন। কিন্তু সেই সব নথি ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় তাঁর ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তৈরির কাজ আটকে রয়েছে। উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি কবিতা বর্মণ বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের তরফে খুব শীঘ্রই ওই এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যা খতিয়ে দেখে তা সমাধান করে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy