Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ডাল’ পার করালেই কেল্লা ফতে

কালিয়াচক ৩ ব্লকের শোভাপুর গ্রাম থেকে বামনগোলা ব্লকের মাধ্যবতী পর্যন্ত প্রায় ১৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত। এর মধ্যে নদী ও জমির কারণে সীমান্তের প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নেই।

 ফস্কা-গেরো: দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিতে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। ফাইল চিত্র

ফস্কা-গেরো: দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিতে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। ফাইল চিত্র

জয়ন্ত সেন 
মালদহ শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৭
Share: Save:

একশোয় কড়কড়ে সাড়ে সাত হাজার টাকা। তাই, সীমান্তে কিসের ১৪৪ ধারা লাগু, আর কিসের বা সীমান্ত বাহিনীর নজরদারি! প্যাকেট বন্দি ‘ডাল’-এর রমরমিয়ে চলছে পাচার। শুধু ডাল-ই নয়, গরুর সহ নেশার ট্যাবলেটেরও পাচার চলছে দেদার। এখন এই চিত্র মালদহ জেলার বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে। তবে, এই জেলায় পাচারের বহর বেশি বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা কালিয়াচক ৩ ব্লক সহ হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লকের একাংশ সীমান্ত এলাকায়। যে কথা জানাচ্ছেন জেলা পুলিশের একাংশই।

কালিয়াচক ৩ ব্লকের শোভাপুর গ্রাম থেকে বামনগোলা ব্লকের মাধ্যবতী পর্যন্ত প্রায় ১৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত। এর মধ্যে নদী ও জমির কারণে সীমান্তের প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নেই। অভিযোগ, এই কাঁটাতারহীন এলাকা ও নদী পথ দেদার পাচারের অন্যতম করিডর।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাচার মারাত্মকভাবে বেড়ে চলায় গত অগস্টের শেষে বিএসএফের আবেদন ও পুলিশি রিপোর্টের প্রেক্ষিতে মালদহ জেলার বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়েই ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। কিন্তু অভিযোগ, সীমান্ত জুড়ে ১৪৪ ধারা লাগু ও বিএসএফের জোরদার নজরদারি থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু এলাকা দিয়ে দেদার পাচার চলছে।

সীমান্ত সূত্রে খবর, কালিয়াচক-৩ ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে এখন বিএসএফের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে ‘ডাল’ পাচার। কী এই ডাল? পাচারকারীদের সাংকেতিক ভাষায় ডাল আসলে কাফ সিরাপ, ফেনসিডিল। সূত্রে খবর, রাতে তো বটেই এমনকি দিনেও টহলরত বিএসএফ জওয়ানদের সঙ্গের লুকোচুরি খেলে পাচারকারীরা এই কাফ সিরাপ বাংলাদেশে পাচার করছে। মূলত, আকন্দবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শুকনগর, ফতেপুর, মিলিক সুলতানপুর, গোলাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের খড়িবোনা, চকমাইলপুর, ষষানি, গোপালনগর, চরিঅনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষটোলা, মহব্বতপুর, দুইশত বিঘি, হাদিনগর, বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকদেবপুর, দৌলতপুর, সবদলপুর ও পারদেওনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পারদেওনাপুর ও শোভাপুর গ্রাম দিয়ে এই পাচার চলছে রমরমিয়ে। প্লাস্টিকের বস্তায় ২৫টি করে সিরাপের প্লাস্টিক বোতলগুলি ভরে পাচারকারীরা কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে ছুড়ে দিচ্ছে ওপারে। এপারের কারবারীদের সঙ্গে মোবাইল ফোন মারফত ওপারের কারবারীদের আগেই যোগাযোগ হয়ে থাকছে। সিরাপ ওপারে ছুড়ে ফেলার পর সময় সুযোগ বুঝে ওপারের কারবারীরা তা নিয়ে চলে যাচ্ছে।

মালদহের সীমান্ত সূত্রে আরও খবর, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কাফ সিরাপ তথা ফেনসিডিলের চাহিদা মারাত্মক। বাংলাদেশ থেকে সেই সিরাপ চলে যাচ্ছে সৌদি আরবে। সে জন্য মালদহের সীমান্ত থেকে ১০০ বোতল সিরাপ ওপারে পাচার করলেই কারবারীদের কমিশন মিলছে সাড়ে সাত হাজার টাকা। যা বছরখানেক আগে ছিল মাত্র দু’হাজার টাকা। কমিশন তিন গুণেরও বেশি বেড়ে যাওয়ায় ডাল পাচারে কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।

শুধু ডালই নয়, শোভাপুরের গঙ্গা নদী পথ দিয়ে, পুরাতন মালদহ ব্লকের মুচিয়া সীমান্তে মহানন্দা নদী পথে ও হবিবপুর ব্লকের আইহো গ্রামে মহানন্দা-টাঙন নদীর সংযোগস্থল দিয়ে গরু ওপারে পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Smuggling Hili Border
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy