অধীর: মাঝে থাক কাঁটাতার, তবু ক্ষণিকের দেখা। চৈনগরে মিলন উৎসবে দুই বাংলা। নিজস্ব চিত্র
কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে উড়ে আসছে উপহার ভর্তি বস্তা। কখনও বাচ্চাদের খেলনা। ঠান্ডা পানীয়ের বোতল। দামি কোম্পানির সিগারেটের প্যাকেট। নামী ব্র্যান্ডের পারফিউম। ইলিশ মাছ। রান্না করা মুরগির মাংস ভর্তি জার, লেপ তোশক, শাড়ি, লুঙ্গি কী নেই তাতে। অন্যপারে দাঁড়িয়ে কেউ লুফে নিচ্ছেন। কেউ মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িয়ে নিচ্ছেন প্রিয়জনের প্রীতি উপহার। কেউ দশ বছর পরে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে ওপারে বৃদ্ধ বাবা-মা দেখছেন। কেউ ভাই, বোন, অন্য আত্মীয়দের ছুঁয়ে দেখার সাধ মেটাচ্ছেন একে অপরের দিকে হাত নেড়ে। কেউ কেঁদে ভাসাচ্ছেন আবেগে।
শুক্রবার উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের সীমান্তে চৈনগর এলাকায় কয়েক কিলোমিটার কাঁটা তারের বেড়ার দু’পাশে দাঁড়িয়ে কয়েক লক্ষ মানুষ। বেড়া আছে। সীমান্তের গেটও বন্ধ। কিন্তু সেই বাধা ছাপিয়ে আত্মীয়তায় ভাসলেন দুই বাংলার মানুষ। মিলন মেলাকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে রইল সীমান্তও। মেলা উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ উভয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তরফেই ছাড় ছিল কাঁটাতার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কথা বলার। সেই কুশল বিনিময় চলল বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত।
রায়গঞ্জের ফুলেশ বর্মণ, স্ত্রী মঞ্জু, দুই নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে এ দিন হাজির সীমান্তে। ব্যাগে করে নিয়ে এসেছেন আপেল, পোশাক। বাংলাদেশের দিনাজপুরে থাকেন তাঁর ভাই ভূপাল। এ দিন কাঁটাতারের ধারে এসেছেন তিনিও। ফুলেশ বলেন, ‘‘১০ বছর পর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হল।’’ আবার রায়গঞ্জের বারদুয়ারি থেকে এসেছেন কান্ত বর্মণ। সঙ্গে স্ত্রী নীতা, মেয়ে সুস্মিতাও রয়েছে। বাংলাদেশের দিকে দাঁড়িয়ে কান্তর মা কালোবালা। কালোবালার সঙ্গে তাঁর ভাই জ্যোতিন ও জ্যোতিনের মেয়ে স্বপ্নাও রয়েছে। ভিড়ের মধ্যে একে অপরকে খুঁজে পেয়ে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারছেন না কেউ। কেঁদে চলেছেন বছর সত্তরের কালোবালা। তার পর শুরু হল উপহার দেওয়ার পালা। ওপার থেকে জ্যোতিন চালের বস্তা ছুড়ে দিলেন। বাঁশের মাথায় বেঁধে সুস্মিতার জন্য খেলনা পাঠানো হল কাঁটাতারের এপারে।
দু’হাতে ইলিশ মাছ নিয়ে হাসছেন মোকারম মাহিদুর ইসলাম এবং তাঁর বন্ধু পঙ্কজ কান্তি বিশ্বাস। দু’জনেই হেমতাবাদে থাকেন। সীমান্তে এসে ওপারের বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। আবদার করেন পদ্মার ইলিশের। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ওপার থেকে ইলিশ এসে হাজির তাঁদের হাতে! মালদহের কালিয়াচক থেকে এসেছেন মতিউর রহমান। স্ত্রী মাজলেনা আসতে পারেননি। ওপারে শালী মাসুদা বিবি তাঁর স্বামী আমরুল শেখ দাঁড়িয়ে। মতিউরের জন্য ঘন ঘন কাঁটাতারের উপর দিয়ে উড়ে আসতে থাকে চালের ব্যাগ, রান্না করা মুরগির মাংসের জার, সিগারেটের প্যাকেট। তাঁর স্ত্রীর জন্য শাড়ি।
বিএসএফ ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সান্তরা, মাকরহাট, শিমুলডাঙার মতো চারটি সীমান্ত চৌকি জুড়েই এ দিন মিলন মেলা হয়। বেলা ৪টেয় সীমান্ত রক্ষীরা ভিড় নিয়ন্ত্রণ শুরু করলে তখন মন ভারাক্রান্ত সকলেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy