Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
tea gardens

এক বেলা স্রেফ সেদ্ধ-ভাত, অন্য বেলা মন ভরায় ফুটবল

রায়পুর চা বাগান বন্ধ থাকলেও ফুটবলের কথা উঠলেই এক পায়ে খাড়া কর্মহীন তরুণ শ্রমিকেরা। বিশ্বকাপের আবহে বন্ধ বাগানেও ফুটবল টুর্নামেন্ট আসে।

খেলা: বন্ধ রায়পুর চা বাগানে ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা হল বৃহস্পতিবার। পুরস্কারে কাপের সঙ্গে খাসি, মুরগি ইত্যাদি। নিজস্ব চিত্র।

খেলা: বন্ধ রায়পুর চা বাগানে ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা হল বৃহস্পতিবার। পুরস্কারে কাপের সঙ্গে খাসি, মুরগি ইত্যাদি। নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:২২
Share: Save:

বন্ধ বাগানের গোলপোস্ট ছুঁয়ে বল বাইরে উড়ে গেলে আফসোস করেন ওঁরা। আবার গোল হলে মাঠের মধ্যে ঢুকে গোলদাতাকে কাঁধে তুলে শুরু হয় তুমুল নাচ! সেদ্ধ-ভাত খেয়ে পেট ভরানো কর্মহীন শ্রমিকদের এটুকুই দিনান্তের উত্তেজনা। এতেই প্রাণের আনন্দ খুঁজে পান ওঁরা।

রায়পুর চা বাগান বন্ধ থাকলেও ফুটবলের কথা উঠলেই এক পায়ে খাড়া কর্মহীন তরুণ শ্রমিকেরা। বিশ্বকাপের আবহে বন্ধ বাগানেও ফুটবল টুর্নামেন্ট আসে। ফাইনাল ম্যাচ দেখতে ভিড় করেন কাজ হারানো চা শ্রমিকেরা। পুরস্কারে কাপের সঙ্গে দেওয়া হয় গোটা খাসি। বাগানে বৃহস্পতিবার বিকেলে হয়ে গেল লাইন কাপ টুর্নামেন্টের ফাইনাল।

এ বাগান বন্ধ হলেও, নিজস্ব ফুটবল দল রয়েছে। সে দল এ বার আশপাশের কোনও টুর্নামেন্টের মূল পর্বে উঠতে পারেনি। বাগানের ছেলের দল হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবলও শুরু হয়। সে আবহেই বাগানের লাইন টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন বাগানের বাসিন্দা চা শ্রমিক এবং এলাকার পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। সে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ছিল এ দিন। পুরস্কারে ছিল কাপ, মেডেল, ছোট পদক এবং দু’টি খাসি। জয়ী দলকে ১৩ কেজি ওজনের খাসি এবং অন্য দলকে ১০ কেজি ওজনের। ফাইনাল খেলা দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন বন্ধ বাগানের শ্রমিকেরা।

এ বছরই প্রথম এ ধরনের টুর্নামেন্টের আয়োজন। এলাকার প্রধান তথা বাগানেরই চা শ্রমিক প্রধান হেমব্রম বলেন, “বাগানের ছেলেরা মুরগির লড়াইয়ের জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। বাগানে আগে ফুটবল খেলা হত। এখন আর ভাল খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। জুয়ার হাত থেকে সরিয়ে ছেলেগুলোকে খেলায় নিয়ে আসতেই এই আয়োজন।”

এ দিন খেলা হল ভগত লাইন বনাম সান্তাল লাইনের। দু’দিন পরেই বিশ্বকাপ ফাইনাল। সে আসন্ন যুদ্ধের কথা মনে রেখে ভগত লাইন নিজেদের আর্জেন্টিনা এবং সান্তাল লাইন নিজেদের ফ্রান্স দল বলে ঠিক করে নেয়। খেলা শুরুর আগে, সে ঘোষণাও হয়। ২-০ গোলে জেতে সান্তাল লাইন। বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে বহুদূরের এক জনপদে চা শ্রমিক পরিবারের ছেলেরা বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া দু’দলের নাম করে জয়ধ্বনিও দিল।

দ্বাদশ, একাদশ শ্রেণির বহু পড়ুয়া এ দিন খেলেছে। মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেওয়া কিশোর, তরুণেরাও খেলেছে। প্রধান নিজেও মাঠে নেমেছিলেন। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অজয় লোহার বললেন, “বাগানে অনেক দিন পরে এমন মজা হল। আমাদের শ্রমিক লাইনের অনেকে খেলা দেখতে এসেছিল। বাগানে কাজ নেই বলে সকলে বাইরে কাজ খুঁজতে যায়। আজকে কাজে না গিয়ে খেলা দেখতে এসেছিল।”

এই বাগানের ভগত লাইনের ফুটবল মাঠের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলা দেখছিলেন চা শ্রমিকেরা। কারও ভগ্ন শরীর, কারও চোখের নীচে কালি, কারও মলিন কাপড়, শীতের বিকেলে কেউ ছেঁড়া চাদর গায়ে। ফুটবল ম্যাচ ঘিরে ওঁদের উত্তেজনা আর কলরবে যেন কিছু ক্ষণের জন্যেও আলোময় হয়ে উঠল বিষণ্ণ বিকেলটা।

অন্য বিষয়গুলি:

tea gardens Tea workers raipur Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy