ছবি: সংগৃহীত
শীতের রোদ গায়ে মেখে সবুজ রঙের কচি কচি পাতা যেন সদ্য আড়মোড়া ভাঙছে, উত্তরের চা বাগানের ছবি এখন এমনই। স্বাদে এবং গন্ধে মরসুমের যে কোনও সময়কে পিছনে ফেলে দেয় শীতঘুম ভাঙা এই সময়ের চা পাতা। চা বাগান পত্তনকারী সাহেবরা যে পাতার নাম রেখেছিলেন ‘ফার্স্ট ফ্লাশ।’ চা পর্ষদের নির্দেশে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ডুয়ার্স এবং তরাইয়ে ‘ফার্স্ট ফ্লাশে’র চা পাতা তোলা যাবে। দার্জিলিঙের বাগানে পাতা তোলার জন্যও আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের শেষ শুক্রবার অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দার্জিলিঙে পাতা তোলা শুরু হবে। সেই হিসেবে দার্জিলিঙের অর্থোডক্স পাতা মার্চের শেষেই প্যাকেটবন্দি হয়ে বাজারে চলে আসার কথা। অর্থাৎ, চা রসিকদের পেয়ালায় দার্জিলিঙের ফার্স্ট ফ্লাশের সুবাস উঠতে আর বেশি দেরি নেই।
ফার্স্ট ফ্লাশের ডুয়ার্সের সিটিসি চায়েরও কদর যথেষ্ট। শীতের শেষ এবং বসন্তের শুরুর সময়ে যে পাতা তোলা হয়, সেই কচি পাতায় চায়ের রং ঘন হয়। স্বাদও হয় ভিন্ন। দুধ দিয়ে বানানোর পরেও সিটিসির চায়ের সুবাস অক্ষুণ্ণ থাকে ফার্স্ট ফ্লাশে। গত মরসুমে ডুয়ার্সের সিটিসি চা দামে টেক্কা দিয়েছিল অসমকেও। একই সময় থেকে অসমেও চা পাতা তোলা যাবে বলে চা পর্ষদ জানিয়েছে। চা পর্ষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান অরুণকুমার রায় জানিয়েছেন, ডুয়ার্স, অসম এবং দার্জিলিঙে সমীক্ষা চালিয়ে বাগানের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই কবে থেকে পাতা তোলা যাবে তা স্থির হয়েছে।
চা মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সচিব সুমন্ত্র গুহঠাকুরতা বলেন, “চা গাছে পাতা বেরিয়েছে। বাগিচা পুরো সুবজ হয়ে গিয়েছে। বেশ লাগছে, চারদিক। পর্ষদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
সাহেবি প্রথা মেনে আগে ডিসেম্বরের শুরুতেই চা পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যেত। তারপর শুরু হয় চা গাছের যত্ন। গাছের ওপরের দিক কেটে দেওয়া হতো। শীতে দু একবার বৃষ্টি পেয়েই চনমন করে উঠত চা গাছ। মার্চ মাসের গোড়া থেকে শুরু হত পাতা তোলা। রং খেলার পর থেকে ভরপুর পাতা তোলা শুরু হয়ে যেত। আবহাওয়া এখন বদলেছে। ডিসেম্বরের পরেও চা গাছে পাতা আসছে। এ দিকে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে বৃষ্টি কমেছে। শীতও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এখন জানুয়ারির শেষ থেকে শীত কমতে শুরু করলেই চা গাছে নতুন পাতা উঁকি দিতে শুরু করে। আবহাওয়া পরিবর্তন খেয়াল রেখে চা পর্ষদ গত বছর থেকে নির্দেশিকা জারি করে ডিসেম্বরে পাতা তোলা বন্ধ করছে। কেননা বাগিচায় পাতা রয়েছে বলেই ডিসেম্বরেও পাতা তোলা হলে গুণমান খারাপ হবে বলে দাবি। বন্ধের পরে ফের কবে থেকে পাতা তোলা শুরু হবে তাও গত বছর থেকে নির্দেশ দিচ্ছে পর্ষদ। গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাতা তোলা শুরু হয়েছিল। এ বছর কিছুটা পিছিয়ে পাতা তোলা হচ্ছে। পর্ষদের দাবি উত্তরবঙ্গে এবার শীত একটু বেশি ছিল।
তবে বৃষ্টি নিয়ে আক্ষেপ আছে ছোট চা বাগানের। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “ডুয়ার্সে বৃষ্টি হয়েছে। জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ, দিনাজপুর শীতের বৃষ্টি পায়নি। আরও ক’দিন পর থেকে পাতা তুললে ভাল হত। শিবরাত্রি, রংখেলা যাক, তারপরে ছোট বাগানে পাতা তোলা হবে।”
ছোট চা চাষিদের আশা, ততদিনের ফার্স্ট ফ্লাশের চায়ের পাতায় রং, স্বাদ আরও খানিকটা ধরবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy