Advertisement
E-Paper

শাসকের দুই গোষ্ঠীর ‘দ্বন্দ্বে’ চলল গুলি, আহত ২২ জন

ইসলামপুরে জেলা পরিষদের চার নম্বর আসনের অধীনে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। তার মধ্যে একটি কমলাগাঁও-সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতে এ বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল।

দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশের তল্লাশি। বুধবার দুপুরে কমলাগাও সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগেশ্বরীতে। নিজস্ব চিত্র

দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশের তল্লাশি। বুধবার দুপুরে কমলাগাও সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগেশ্বরীতে। নিজস্ব চিত্র paulavijit31@gmail.com

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ০৯:১৬
Share
Save

এক দল তৃণমূল কর্মী। আর এক দল তৃণমূল পন্থী ‘নির্দলের’ অনুগামী। অভিযোগ, এই দুই গোষ্ঠীর গন্ডগোলের জেরে, উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থানার আতালডাঙি এলাকা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দু’পক্ষের গন্ডগোলে গুলি চলার ও বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ছররার আঘাতে জখম হন ২২ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এক জনের আঘাত গুরুতর হওয়ায়, তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাকিরা ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবারও ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠে ওই এলাকা। এক তৃণমূলপন্থী ‘নির্দলের’ অনুগামীর খড় রাখার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ দু’দিনই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছে বিরোধীরা।

ইসলামপুরের পুলিশ সুপার যশপ্রীত সিংহ বলেন, ‘‘আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, ছররার আঘাতেই আহত হয়েছেন সকলে। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’

ইসলামপুরে জেলা পরিষদের চার নম্বর আসনের অধীনে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। তার মধ্যে একটি কমলাগাঁও-সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতে এ বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তবে জেলা পরিষদের আসনে লড়াই ছিল তৃণমূলপন্থী ‘নির্দল’ ও তৃণমূল প্রার্থীর মধ্যে। নির্দল প্রার্থী ছিলেন চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের মেয়ে আরজুনা বেগম। আর তৃণমূল প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন মৌসুমী খাতুন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মঙ্গলবার এই দুই গোষ্ঠীর ‘কোন্দলেই’ গুলি চলে।

অভিযোগ, ওই দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলপন্থী ‘নির্দলের’ অনুগামী কর্মী, সমর্থকেরা আতালডাঙির দলীয় কার্যালয়ে বসেছিলেন। কাছেই জড়ো হয়েছিলেন চতরাগছের তৃণমূলের কর্মীরা। মৌসুমীর স্বামী জাহিদুলের দাবি, ‘‘হঠাৎই আমাদের লোকজনের সঙ্গে গন্ডগোল শুরু করে ওরা। কোনও রকম বিবাদে না জড়িয়ে আমাদের লোকেরা বাড়ি ফিরছিলেন। পিছন থেকে তাঁদের লক্ষ করে গুলি, বোমা ছোড়া হয়। ভোটের আগে থেকেই ওরা হুমকি দিচ্ছিল। এ দিন হামলা চালিয়েছে। পুলিশকে বলেছি ঘটনার তদন্ত করতে।’’ পক্ষান্তরে, আরজুনার স্বামী জাভেদ বলেন, ‘‘এখন নির্দল বলে কিছু নেই। সবাই তৃণমূল। শুনেছি, ওখানে পার্টি অফিস নিয়ে একটা গন্ডগোল হয়েছে।’’

বুধবার ডাঙ্গিতে বদরুল জামা নামে এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির খড় রাখার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, বদরুল তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আব্দুল হকের অনুগামী। তিনিও নির্দল প্রার্থী আরজুনার সমর্থনে প্রচার করেছিলেন। আব্দুল বলেন, ‘‘যারা গন্ডগোল করেছে, তারা কেউ তৃণমূল করে না। এখানে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের কোনও
ব্যাপার নেই।’’

তবে ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। বুধবার বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘যে দল দুর্নীতি ও পুলিশের মদতকে আশ্রয় করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, সে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়বে সেটাই স্বাভাবিক বিষয়। ইসলামপুরে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ক্ষত কতটা গভীর, তা প্রকাশ হল।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘বোর্ড গঠন ঘিরে গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরে ইসলামপুরে ২২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে শুনতে পাচ্ছি। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আর ওই পদে থাকাই উচিত নয়।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘‘রাতে হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। ওঁরা জানিয়েছেন, বাড়ি ফেরার সময় ওঁদের উপরে হামলা হয়েছে। সুজালিতে কোনও কোন্দল নেই। প্রত্যেকেই তৃণমূল করেন। যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, পুলিশকে বলেছি, কঠোর হাতে ব্যবস্থা নিতে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Islampur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}