—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দরমার বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে খেত। খানিকটা কাপড় দিয়েও ঢাকা। কাপড়ের ফাঁক গলে স্প্রে হাতে ভিতরে পৌঁছে যান রাজেন (নাম পরিবর্তিত)। গাছের শরীরে রাসায়নিক ছিটিয়ে বেরিয়ে আসেন। বাড়ির দাওয়ায় বসে নির্বিকার মুখে বলেন, ‘‘ঝুঁকি অনেক। পুলিশ এসে কেটে দেয়। ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। তার পরেও বেশি পয়সার জন্য গাঁজা চাষ করি।’’ ফি বছর বিঘার পরে বিঘা জমির গাঁজা খেত কেটে নষ্ট করে আগুন ধরিয়ে দেয় পুলিশ ও আবগারি দফতর। মামলা হয় অনেকের নামে, গ্রেফতারও হয়। দোষ প্রমাণ হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। তার পরেও রাজেনরা প্ৰতি বছর গাঁজা চাষ করেন।
রাজেন জানান, এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করে লাভ হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে গাঁজা চাষ করে লাভ হয় ছয় থেকে সাত লক্ষ টাকা। সেই গাঁজা ব্যাগ-বন্দি হয়ে চলে যায় অন্য রাজ্যে। আবগারি দফতরের কোচবিহার জেলার সুপারিনটেন্ডেন্ট সাঙ্গে ডোমা ভুটিয়া বলেন, ‘‘অতিরিক্ত লাভের আশায় গাঁজা চাষ করেন অনেকে। কিন্তু এটা পুরোপুরি বেআইনি। সে হিসেবেই পদক্ষেপ করা হয়।’’ কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানান, এখন পর্যন্ত কোচবিহারে প্রায় তিন হাজার বিঘের গাঁজা খেত নষ্ট করা হয়েছে।
গাঁজা চাষ হয় দুই সময়ে। একটিকে বলা হয় ‘আষাঢ়ি’, অপরটি ‘হেমতি’। ‘ভাল মানের’ যে গাঁজা, তা হয় আষাঢ় মাসেই। ‘হেমতি’র চাষ শুরু হয় আরও তিন মাস পিছিয়ে। ইদানিং ‘মণিপুরি’ গাঁজার চাষও শুরু হয়েছে কোচবিহারে। ওই গাঁজার দাম সব থেকে বেশি। কিন্তু কোচবিহারের মাটিতে সে চাষ ততটা সফল হচ্ছে না বলে দাবি। চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যেই গাঁজা গাছ পরিণত হয়। এর পরে সেই গাছ তুলে নেওয়া হয়। তোর্সা, মানসাই, ধরলা, কালজানি নদীর দু’ধারের জমিতে গাঁজা চাষ হয় কোচবিহারে। এক বিঘা জমিতে এক হাজারের বেশি চারা রোপণ করা হয়। তার মধ্যে কিছু চারায় ফুল আসে। তাতে গাঁজা ভাল হয় না। সেই গাছ জমি থেকে তুলে দিতে হয়। তার পরেও এক বিঘা জমিতে পাঁচশো গাছ থেকে যায়। একটি গাছ থেকে চার থেকে পাঁচ কেজির গাঁজা তৈরি হয়। আবার কিছু গাছ থেকে পরিমাণে কম পাওয়া যায়।
পুলিশ তদন্তে নেমে অবশ্য জানতে পেরেছে, গাঁজা চাষের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি চাষিদের হাতে থাকে না। ওই চাষের পিছনে রয়েছে একটি বড় চক্র। গাছ রোপণ, পরিচর্যার জন্য যারা আগাম টাকা তুলে দেয় চাষিদের হাতে। গাছ পরিণত হওয়ার পরে, মুনাফার বেশির ভাগ ঢুকে যায় চক্রের সদস্যদের হাতে। ওই চক্রের মাধ্যমে কলকাতা, দিল্লি, এমনকি, ভিন্ দেশ থেকে গাঁজার ‘পাইকার’ (যারা দর হাঁকিয়ে এক বারে প্রচুর গাঁজা কিনে নেয়) পৌঁছয় ওই গ্রামগুলিতে। তা কিনে নেয় তারা। চাষিদের হাতে থাকে লাভের সামান্য অংশ। আর আইনি শাস্তির ঝুঁকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy