আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের কিসান মান্ডিতে সরকারি ভাবে ধান কেনার আগে চলছে কৃষকদের নাম নথিভুক্তকরণের কাজ। নিজস্ব চিত্র।
খাঁ খাঁ করছে সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্র। মাঝেমধ্যে এক-দু’জন আসছেন। কিন্তু কারও কাছেই ধান দেখা যাচ্ছে না। বলছেন, ‘‘আগে বুকিং করি। ফের ধান নিয়ে আসব।’’ ‘বুকিংও’ যে সবার হচ্ছে, তা নয়। কারণ, কারও প্রয়োজনীয় আধার সংযোগ হয়নি। কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ‘ভেরিফিকেশন’ হয়নি। সার্ভার খারাপ থাকায় সে সব কাজ হতেও সময় লাগবে আরও তিন-চার দিন। তাই ধান বিক্রির জন্য ‘বুকিং’ করতে গিয়েও ফিরতে হয়েছে অনেককে। বুধবার সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রের এমনই চিত্র কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে। আলিপুরদুয়ারে একটি কেন্দ্রে অবশ্য ধান কেনা হয়েছে।
কোচবিহার সদরের ঘুঘুমারির পাটিহাটে একটি সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। দুপুর পর্যন্ত সেখানে হাজির হন তিন কৃষক। তাঁদের মধ্যে এক জন আধার কার্ড সংযোগ করেছেন, আর এক জন নাম নথিভুক্ত করেছেন। অন্য জন এসেছিলেন ধান বিক্রির 'বুকিং' করতে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ‘ভেরিফিকেশন’ না হওয়ায় তাঁর সেই কাজ হয়নি।
দিনহাটার কৃষি মেলায় কিসান মান্ডিতে বেলা ১টা নাগাদ গিয়ে দেখা যায়, মোতালেব সরকার নামে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের এক জন আধিকারিক বসে রয়েছেন। কয়েক জন কৃষক সেখানে কাগজপত্র সংশোধনের কাজ করছেন। তিন জন কৃষক ধান বিক্রির জন্য তাঁদের নাম নথিভুক্ত করেন। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রথম দিন কেউ ধান নিয়ে আসেননি। ধান আনলে, অবশ্যই সরকারি নিয়ম মেনে তা কিনে নেওয়া হবে।’’ কৃষক মজিদুল রহমান বলেন, ‘‘এখনও সপ্তাহ তিনেক দেরি রয়েছে ধান কাটার। কাটার পরেই তা ক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাব।’’
তুফানগঞ্জ কিষান মান্ডি এবং নাটাবাড়ি ধান ক্রয় কেন্দ্র সকাল থেকে খুলে দেওয়া হয়। প্রথম দিন অবশ্য দু’টি কেন্দ্রের কোথাও চাষিরা ধান বিক্রি করতে যাননি। তুফানগঞ্জের কিসান মান্ডি ছিল প্রায় ফাঁকা। দুই-এক জন অবশ্য নাম নথিভুক্ত করেন। ধান কেনার জন্য সব প্রস্তুতি রাখা হলেও অভিযোগ, এ দিন দেখা মেলেনি ব্লক প্রশাসন, খাদ্য দফতর ও কৃষি দফতর মিলে তিন সদস্যের দলের কারও। তুফানগঞ্জ মহকুমা খাদ্য দফতরের আধিকারিক রূপম মণ্ডল বলেন, ‘‘তিন সদস্যের কমিটি গঠন ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। ধান কেনা নিয়ে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তারা পৌঁছে যাবে।’’ মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জেও ছিল এক চিত্র। মাথাভাঙা ১ ব্লকের পচাগর কৃষক বাজারে ধান ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে কৃষকরা নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেন।
সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে এ দিন সকাল থেকেই আলিপুরদুয়ার জেলার ক্রয় কেন্দ্রগুলিতে হাজির ছিলেন কর্মীরা। কিন্তু কৃষকেরা না যাওয়ায় একটি জায়গা বাদে আর কোথাও প্রথম দিন ধান কেনা যায়নি। কোনও কোনও সিপিসি-তে হাতেগোনা কয়েক জন কৃষকের দেখা মিললেও, তাঁরা গিয়েছিলেন মূলত ‘রেজিস্ট্রেশন আপডেট’ বা কৃষক বন্ধুর সঙ্গে আধার কার্ডের সংযোগ করাতে।
আলিপুরদুয়ার জেলায় নয়টি ‘সিপিসি’ ছাড়া, সোসাইটি ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে আরও ৪২টি জায়গায় ধান কেনার কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাদের মধ্যে শুধু কুমারগ্রাম ব্লকে একটি সোসাইটির মাধ্যমে এ দিন সাত কুইন্টাল ধান কেনা হয়। আলিপুরদুয়ারের খাদ্য নিয়ামক বাবুল ভক্ত বলেন, “একটি জায়গা বাদে আর কোথাও চাষিরা এ দিন ধান আনেননি। আশা করছি, কেন্দ্রগুলিতে ধীরে ধীরে কৃষকদের ভিড় জমতে শুরু করবে।’’
প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, এখনও জেলার বহু জমিতে ধান পড়ে রয়েছে। সে জন্যই এ দিন জেলার অধিকাংশ ক্রয় কেন্দ্রেই কৃষকদের দেখা মেলেনি। আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের চেপানি এলাকার কৃষক জগদীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখনও ধান দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত হইনি। কারণ, জমিতে এখনও কাঁচা ধান রয়েছে। ধান কাটার পরেই সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান দেওয়ার কথা ভাবব।’’
ফালাকাটার কৃষক শশধর দাস বা শঙ্কর বণিকরাও জানান, আরও ১০-১৫ দিন পর থেকে ধান কাটা শুরু হবে। তার পরে তা বিক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy