Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

অসুস্থ ছেলে ওষুধ পাচ্ছে কি, দুশ্চিন্তা

উত্তরপ্রদেশে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে হরিশ্চন্দ্রপুরের আরও পাঁচ জনের সঙ্গে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সাগর।

উদ্বেগ: কোলের ছেলেকে নিয়ে চিন্তায় সাগর আলির স্ত্রী নূপুর (বাঁ দিকে)।

উদ্বেগ: কোলের ছেলেকে নিয়ে চিন্তায় সাগর আলির স্ত্রী নূপুর (বাঁ দিকে)।

বাপি মজুমদার
হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৪
Share: Save:

‘ও তো খুব অসুস্থ। গোলমাল করবে কী করে?’— বাড়িতে আসা জনপ্রতিনিধিদের কাছে এমনই প্রশ্ন তুললেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার সাগর আলির স্ত্রী নূপুর বিবি। দু’বছরের শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে তাঁর আর্তি, ‘‘ওকে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরিয়ে দিন, এটুকুই চাই।’’

আর সাগরের বাবা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘ছেলেটা জেলে। ওষুধ পাচ্ছে কি না কে জানে। অত্যাচার হলে তো ছেলেটা মরে যাবে। ঝুঁকি থাকলেও এক ছেলেকে খোঁজ নিতে উত্তরপ্রদেশে পাঠানোর কথা ভাবছি।’’

সাগরের পরিজন-পড়শিরা জানান, সাত মাস আগে ওই যুবকের কানে অস্ত্রোপচার হয়েছিল বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে। চেক-আপের জন্য এক বছর পরে সাগরকে ফের ওই শহরে যেতে বলেছিলেন চিকিৎসকেরা। তত দিন নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি পুরোপুরি বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। কিন্তু নভেম্বর মাসে তাঁর গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসায় সব খরচ হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যেই ফের নতুন রোগ। চিকিৎসার টাকা জোগাড়েই অশক্ত শরীর নিয়ে লখনউয়ে পুরনো কাজের জায়গায় ফিরেছিলেন সাগর। তার পরেই পরিস্থিতি বদলায়। উত্তরপ্রদেশে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে হরিশ্চন্দ্রপুরের আরও পাঁচ জনের সঙ্গে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সাগর।

বাড়িতে আসা জনপ্রতিনিধিদের কাছে স্বামীকে সুস্থ ভাবে ফিরিয়ে আনার আর্তি জানান নূপুর বিবি। অসুস্থ স্বামী কী ভাবে গোলমাল করতে পারে— দু’বছরের শিশুসন্তানকে কোলে আঁকড়ে সেই প্রশ্নও তোলেন।

জেলা পরিষদের শিশু ও নারী কর্মাধ্যক্ষ মার্জিনা খাতুনের পরে ধৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ডাঙ্গিলায় গিয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান তজমুল হোসেন। সেখানে যান হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলম, চাঁচলের বিধায়ক আসিফ মেহবুবও।

তজমুল বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহে কলকাতায় যাব। সুযোগ পেলে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানাব। জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী ও সুব্রত বক্সির সঙ্গেও দেখা করবো।’’

তজমুলের দাবি, ধৃতরা কেউই হিংসায় জড়িত ছিলেন না। পুলিশ তাঁদের ঘর থেকে বার করে গ্রেফতার করেছে। কাজের খোঁজে সকলে উত্তরপ্রদেশে গিয়েছিলেন। কেউ চিকিৎসার টাকা জোগাতে, কেউ সংসার বা দিদি-বোনের বিয়ের খরচ জোগাড়ে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, দিদির বিয়ের টাকা জোগাড় করে দিনকয়েক পরেই ঘরে ফেরার কথা ছিল ডাঙ্গিলার খাইরুল হক ও সালেদুল হকের। দু’জনেই গ্রেফতার হওয়ায় কার্যত কূল হারিয়েছেন তাঁদের পরিজনেরা। ধৃতদের পাশাপাশি সেখান থেকে ভয়ে পালিয়ে আসা শ্রমিকদের কাহিনিও প্রায় একই রকম। কিন্তু সব ছাড়িয়ে এখন গ্রেফতার হওয়া ছয় শ্রমিক কী ভাবে ছাড়া পাবেন, তা ভেবেই ঘুম উড়েছে তাঁদের পরিজনদের।

বিধায়ক মোস্তাক আলম ও আসিফ মেহবুব বলেন, ‘‘ধৃতরা সকলেই খেটে খাওয়া নিরীহ শ্রমিক বলেই জেনেছি। রাজ্য সরকার উদ্যোগী হলে তাঁদের জন্য কিছু করা সম্ভব। চিঠি দিয়ে সরকারকে সে কথা জানাব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy