Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Malbazar Flash Flood

দু’জায়গার অতিবৃষ্টিতে কি মাল নদীতে বিপর্যয়, ভাবনা

প্রশাসন সূত্রের দাবি, দুই এলাকারই বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, দশমীর দিন দুপুরে ও বিকেলেও দফায় দফায় অতিবৃষ্টি হয়েছিল ওই দুই এলাকায়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৩৮
Share: Save:

মাল নদীতে দশমীর বিসর্জনে বিপর্যয়ের পিছনে পাহাড়ি এলাকার দু’জায়গায় অতিবৃষ্টির খোঁজ মিলেছে বলে দাবি করল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্র। একটি হল কালিম্পঙের ডালিমকোট জঙ্গলের নীচে বুড়িখোলার জঙ্গল, যেখানকার ঝর্না থেকে মাল নদী নেমে এসেছে। অন্যটি হল মিনগ্লাস চা বাগান এলাকা, যেখানকার একাধিক ঝোরার জল এসে পড়ে অদূরে বয়ে চলা মাল নদীতে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু মঙ্গলবার বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমরা দু’জায়গায় বৃষ্টির তথ্য পেয়েছি। সে তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট পাইনি। সে রিপোর্ট পাওয়ার আগে, নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

প্রশাসন সূত্রের দাবি, দুই এলাকারই বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, দশমীর দিন দুপুরে ও বিকেলেও দফায় দফায় অতিবৃষ্টি হয়েছিল ওই দুই এলাকায়। বাসিন্দাদের থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য খতিয়ে দেখে প্রাথমিক অনুমান, বুড়িখোলায় মেঘভাঙা বৃষ্টি হতে পারে। মিনগ্লাসেও কয়েক ঘণ্টা তোড়ে বৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। প্রশাসনের বক্তব্য, এই দুই জায়গায় ভারী বৃষ্টি হলে, তার জল সরাসরি মাল নদীতে এসে পড়ে। অথচ, এই দুই এলাকার কোথাও সেচ দফতরের বৃষ্টি মাপার পরিকাঠামো নেই। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরও বুড়িখোলা বা মিনগ্লাসে আশপাশের বৃষ্টি তথ্য নেয় না। তার ফলে, এই এলাকায় কত বৃষ্টি হয়েছে তার কোনও তথ্য সেচ বা আবহাওয়া দফতরের কাছে নেই।

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় স্তরে মৌখিক ভাবে পাওয়া তথ্য-নির্ভর এই প্রাথমিক রিপোর্টটি ধরেই জেলা প্রশাসন মনে করছে, বুড়িখোলা এবং মিনগ্লাসের বৃষ্টির কারণেই দশমীর বিসর্জনের সময় মাল নদীতে হড়পা বান এসেছিল। তবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এখনও চলছে। প্রশাসন সূত্রের দাবি, পাহাড়ি এলাকায় ক্রমাগত বৃষ্টি চলায় এখনও উপরের দিকে, অর্থাৎ, বুড়িখোলার জঙ্গলের উপরে পৌঁছতে পারেনি প্রশাসনের দল। দুর্গম এলাকা বলে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত সম্ভব নয়, মোটরবাইকে যেতে হয়। কাজেই, সে সব এলাকায় পৌঁছলে, সেখান থেকেও বৃষ্টির তথ্য মিলতে পারে বলে দাবি।

দশমীর রাতে হড়পা বানে মাল নদীর ঘাট থেকে ভেসে গিয়ে আট জনের মৃত্যু হয়েছিল। জখম হয়েছিলেন অনেকেই। বিসর্জনের ঘাট তৈরির জন্য নদীর একাংশে বাঁধ দিয়ে জলস্রোত অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মালবাজার পুরসভার বিরুদ্ধে। সে অস্থায়ী বাঁধের কারণেই ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও কোথা থেকে নদীতে দশমীর রাতে জলস্রোত এল তা নিয়ে প্রথম থেকেই অন্ধকারে প্রশাসন। সরকারি তরফে জানানো হয়, মালবাজার বা আশেপাশে দশমীর দিন বৃষ্টি হয়নি। সিকিম, ভুটানেরও বৃষ্টি-তথ্য মেলেনি। তবে মাল নদীতে তোড়ে জল এল কোথা থেকে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। হড়পা বানের কারণ খুঁজতে জেলা প্রশাসনও তদন্ত শুরু করে। সেচ দফতরের থেকে রিপোর্টও চাওয়া হয়। সে খোঁজখবর করতে গিয়েই বুড়িখোলা এবং মিনগ্লাসে বৃষ্টির তথ্য মিলেছে বলে দাবি।

এ দিকে, দুর্ঘটনা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে পাহা়ড়ি নদীগুলিতে হড়পা বানের ন্যূনতম পূর্বাভাস পেতে নতুন পাঁচটি বৃষ্টি মাপার কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। ভুটান লাগোয়া বানারহাট, সিকিমের বৃষ্টির আঁচ পেতে মালবাজারের পাহাড়ি এলাকায়, নাগরাকাটা ও মেটেলিতে নতুন বৃষ্টি মাপার কেন্দ্র তৈরি হবে। এ জন্য পাঁচ ফুট লম্বা, পাঁচ ফুট চওড়া জায়গা হলেই যন্ত্রপাতি বসানো সম্ভব। জেলাশাসকের কথায়, “এই কেন্দ্রগুলি তৈরি হলে বৃষ্টির খবর আগে থেকে পাওয়া যাবে। কিছু আগে মানুষকে সর্তক করা যাবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Malbazar Flash Flood Heavy Rainfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy