Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Elephant Attack Kalchini

‘একটুর জন্য হাতিটার পা শরীরে পড়েনি’ 

বৃহস্পতিবার দুপুরে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের চিলাপাতা জঙ্গলের দক্ষিণ মেন্দাবাড়িতে হাতির হানায় যে তিন জনের মৃত্যু হয়, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন নিমাও।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পার্থ চক্রবর্তী, সৌম্যদ্বীপ সেন
কালচিনি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১০
Share: Save:

কাঠ কুড়োতে-কুড়োতে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে পড়েছিল দলটা। চার জনের কেউই বিপদের আঁচ পাননি আগে। হঠাৎই ঝোপঝাড় ভেঙে হাজির হয়েছিল বিরাট এক হাতি। কেউ বুঝে ওঠার আগেই সেটি হামলা করে চার জনের উপরে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তখনও আতঙ্কে কাঁপছেন চার জনের ওই দলে থাকা নিমা চারোয়া। তিনি বলেন, ‘‘সামনে বিরাট হাতি দেখে, আমি পড়ে গিয়ে প্রায় বেঁহুশ হয়ে যাই। শুয়ে শুয়েই দেখি, আমার সঙ্গে থাকা দু’জনকে আক্রমণ করছে হাতিটা। আমার শরীরের উপর দিয়েও বার তিনেক ডিঙিয়ে গিয়েছে। এক চুলের জন্য ওর পা আমার শরীরে পড়েনি। তা হলে বাকি তিন জনের মতো আমারও শরীরটা
থেঁতলে যেত।’’

বৃহস্পতিবার দুপুরে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের চিলাপাতা জঙ্গলের দক্ষিণ মেন্দাবাড়িতে হাতির হানায় যে তিন জনের মৃত্যু হয়, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন নিমাও। বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘লকড়ি’ (জ্বালানি কাঠ) সংগ্রহ করতে এ দিন দুপুরে আলিপুরদুয়ারের কালচিনির দক্ষিণ মেন্দাবাড়ির বাসিন্দা দশ-বারো জন মহিলা দুটি দলে ভাগ হয়ে চিলাপাতার জঙ্গলে যান। বনকর্তাদের দাবি, তাদের অনেকেই জাতীয় উদ্যানের গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল। সেখানে বুনো হাতির হামলায় মৃত্যু হয় রেখা বর্মণ (৪৫), চাঁদমণি ওরাওঁ (৪৬) এবং সুকরমণি কাছুয়ার (৫০)। দু’জনের মৃত্যু তাঁর চোখের সামনে হলেও, তৃতীয় জন কী ভাবে মারা গেলেন তা দেখেননি গুরুতর জখম নিমা। তাঁর কথায়, ‘‘কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পরে কোনও মতে ঈশ্বরের নাম নিতে নিতে সেখান থেকে পালিয়ে আসি।” এ দিকে, হাতির হামলার পরেই জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে যাওয়া
বাকিরা কোনও মতে প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে আসেন। নিমাকে দ্রুত আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিমা বলেছেন, “মাঝেমধ্যে কোনও বিপদের আশঙ্কা থাকলে বনকর্মীরা জঙ্গলে ঢুকতে বাধা দেন। কিন্তু এ দিন কেউ বাধা দেননি।’’ যদিও বন দফতর জানিয়েছে, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের চিলাপাতা রেঞ্জে ২৩টি বুনো হাতির একটি দল ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে বুধবার রাতেই আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। সেই দলের কোনও হাতির হামলাতেই ওই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বন দফতরের একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি ওই এলাকায় একটি হস্তিশাবক আহত হয়েছিল। সেটির চিকিৎসা চলছে। মা-হাতি খেপে গিয়ে তাণ্ডব
চালাতে পারে।

এ দিকে, বুধবার গভীর রাতে কালচিনির নিমতিঝোড়ায় একটি স্কুলে তাণ্ডব চালায় বুনো হাতি। ভাঙে একটি বাড়িও। হাতির হামলায় নিমতিঝোড়া জুনিয়ার বেসিক স্কুলের শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানলা গুঁড়িয়ে যায়। মিডডে মিলের জন্য রাখা তিন বস্তা চালও সাবাড় করে হাতিটি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রেমজিৎ চিক বরাইক বলেন, ‘‘স্কুলের পরীক্ষা সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এখন ক্লাস হচ্ছে না। শীঘ্র স্কুলের শ্রেণিকক্ষটি মেরামত না হলে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন শুরু করা
যাবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kalchini
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy