Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

ভোটের জেরে রক্তের আকাল

এ যেন গোদের ওপর বিষফোড়া! ভোটের হাওয়া যত গরম হচ্ছে, ততই তাল মিলিয়ে গরম হচ্ছে চৈত্রের আবহাওয়া। আর এই দু’য়ের জেরে বন্ধ হয়েছে রক্তদান শিবির। ফলে মালদহ মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মজুত নেই এক ইউনিটও রক্ত। রোগীদের জন্য রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিজনেরা।

ব্লাডব্যাঙ্কের সামনে লাইন রোগীর আত্মীয়দের।—নিজস্ব চিত্র

ব্লাডব্যাঙ্কের সামনে লাইন রোগীর আত্মীয়দের।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

এ যেন গোদের ওপর বিষফোড়া! ভোটের হাওয়া যত গরম হচ্ছে, ততই তাল মিলিয়ে গরম হচ্ছে চৈত্রের আবহাওয়া। আর এই দু’য়ের জেরে বন্ধ হয়েছে রক্তদান শিবির। ফলে মালদহ মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মজুত নেই এক ইউনিটও রক্ত। রোগীদের জন্য রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিজনেরা।

শনিবার সকাল থেকেই দেখা গেল রক্তের জন্য রোগীর আত্মীয়রা ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। সেখানে রক্ত না মিললে রোগীর আত্মীয়দেরই খুঁজে আনতে হচ্ছে রক্তদাতাদের। তবেই চিকিৎসা হচ্ছে মুর্মূষূ রোগীদের। ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে হবিবপুরের বাসিন্দা রেন্টা মুর্মু বলেন, ‘‘আমার মেয়ের অস্ত্রোপচার করে প্রসব হয়েছে। এর জন্য দু’ইউনিট রক্ত দরকার। সকাল থেকে ঘুরছি। কোনও রকমে এক জনকে জোগাড় করে নিয়ে এসে এক ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করতে পেরেছি। কী ভাবে বাকিটা জোগাড় করব বুঝতে পারছি না।’’ এমনই সমস্যার কথা জানালেন গঙ্গারামপুর থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে আসা প্রিয়জিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা বলছেন চার প্যাকেট রক্ত লাগবে। এ দিকে ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখি এক ইউনিটও রক্ত নেই। বাবার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। কী করব জানি না।’’

ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের ঘাটতি থাকায় সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসাতে আহ্বান জানিয়েছেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রতীককুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, ‘‘মাস খানেক ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলল। তার পরেই ভোট ঘোষণা হয়ে যায়। ফলে রক্তদানের শিবির তেমন হয়নি বিগত মাসগুলিতে। এ ছাড়া গরম থাকায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও শিবির আয়োজন করতে পারেনি।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনিক জেলায় প্রায় ৭০ ইউনিটের মতো রক্তের প্রয়োজন হয়। এই জেলায় ইতি মধ্যে ৬০০ জনের মতো থ্যালাসেমিয়া রোগী আক্রান্ত রয়েছেন। তাঁদের জন্য প্রতি মাসে কম পক্ষে ৩০০ ইউনিট রক্ত মজুত রাখতে হয়। গত মাসে ২০০ ইউনিট রক্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছিল। এই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের উপরে নির্ভর করে ইংরেজবাজার শহরের ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল। এ ছাড়া একটি মহাকুমা হাসপাতাল, ১৫টি গ্রামীণ হাসপাতাল নির্ভর করে এই ব্লাড ব্যাঙ্কের উপরেই। সদর হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার পর থেকে জেলার পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড, বিহার, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর-সহ নানা জায়গা থেকে প্রচুর রোগী এখানে ভিড় জমান।

অভিযোগ, গত সোমবার থেকে কোনও গ্রুপেরই এক ইউনিটও রক্ত মজুত নেই ব্লাড ব্যাঙ্কে। ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেলায় মোট আটটি রক্তদান শিবির হয়েছিল। শিবিরগুলি থেকে সংগ্রহ হয়েছিল ২৯০ ইউনিট রক্ত। চিকিৎসকেরা জানান, গরমের সময় রক্তদানের প্রতি মানুষ তেমন উৎসাহ থাকে না। প্রতি বছরই এই সময়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্তের সংকট দেখা দেয়। তবে এবার গরমের প্রথম থেকেই এমন ব্যাপক হারে রক্তের সংকট দেখা দেওয়ায় উদ্বিগ্ন মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ।

মেডিক্যাল কলেজের এক কর্তা বলেন, ‘‘মালদহে প্রায়ই পথ দুর্ঘটনা ঘটে। এই সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটলে সমস্যা হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, মেডিক্যালে দৈনিক কমপক্ষে ১০০ জন প্রসূতি সন্তান প্রসব করেন। তার মধ্যে ৩৫ শতাংশ হয় অস্ত্রোপচার করে। সেই সময় অন্তত এক ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়।’’ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ প্রতীকবাবু বলেন, ‘‘আমরা মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই শিবিরের আয়োজন করব। তাতে যদি কিছুটা হলেও সমস্যা কমে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy