প্রতীকী ছবি।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভাঙা ইটের টুকরো। পুরো মহল্লা জুড়ে এমনই ধ্বংসস্তূপের ছবি। তার মধ্যেই ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর। এমনই এক কুঁড়ের মাটির বারান্দায় বসে একনাগাড়ে ডালি-কুলো নিয়ে বিড়ি বেঁধে চলেছে বছর চোদ্দোর এক কিশোরী। মাত্র আট বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে সে। মাসখানেক আগে গঙ্গা ভাঙনে হারিয়েছে ভিটেটুকুও। স্কুল, টিউশন— সবই তো ভেসে গিয়েছে করোনা আবহে। মেয়েটির কিন্তু ভাবান্তর নেই। বিড়ি বেঁধে চলেছে সে নাগাড়ে।
সে চোদ্দো বছরের চুমকি মণ্ডল। সাকিন, মালদহের বিননগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে। গঙ্গাপাড়ের ওই গ্রাম, দুর্গারামটোলার স্কুলেই পড়ত সে এত দিন। এখন বিড়ি বেঁধে চলেছে চুমকি।
না বাঁধলে চলবে কী করে! তিন ভাইবোন আর মায়ের সংসারে সে-ই তো এই কাজে মূল হাত।
চুমকির বয়স যখন সবে আট, জটিল রোগে মৃত্যু হয় বাবা রূপচাঁদ মণ্ডলের। মায়ের হাতে যায় সংসারের ভার। তিনিও বিড়ি বাঁধেন। কিন্তু শারীরিক ভাবে অসুস্থ সনেকার হাত এখন তেমন চলে না। তা হলে উপায়? এই সংসারে অন্ন জোগাবে কে? অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চুমকি তাই বিড়ি বাঁধে।
অগস্টের শেষ সপ্তাহে গঙ্গা ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে চুমকিদের পাকা বাড়ি। চাটাইয়ের বেড়ার উপরে টালির ছাউনি দেওয়া ঘর ছিল তাদের। সরকারি প্রকল্পে ঘর পেয়েছিল চুমকিরা। পাকা বাড়িতে থাকার স্বপ্ন যে অনেক দিনের। কিন্তু এক লহমায় সব কেড়ে নিয়েছে গঙ্গা। এখন ফের নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে বিড়ি বাঁধে চুমকি।
স্কুল, পড়াশোনা নেই। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনে দেড় হাজার বিড়ি বাঁধে চুমকি। “এক হাজার বিড়ি বাঁধতে পারলেই মিলবে দেড়শো টাকা। সেই টাকায় আমাদের হাঁড়ি চড়ে। এখন স্কুলও নেই। তাই বেশি করে বিড়ি বেঁধে বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা করছি। ফের তো ঘরও বাঁধতে হবে,” বলে চুমকি।
গ্রামের নাম দুর্গারামটোলা হলেও পুজোর প্রস্তুতি নেই। ঢাকের গুড়গুড় শব্দ নয়, নদী ভাঙনে সবহারাদের আর্তনাদ শুনতে পান গ্রামবাসীরা। চুমকির মা সনেকা বলেন, “আমার বাড়ির দুর্গা চুমকিই। দুর্গার মতো দশ হাত না থাকলেও দু’হাতেই সংসারের হাল ধরেছে সে।” সে কথা শুনে হেসে সায় দেন স্কুল শিক্ষক মোক্তার হোসেন। বলেন, ‘‘ওরাই তো এখানকার মা দুর্গা। ওদের দেখলেই যেন পুজো দেখার আনন্দ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy