Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Jalpaiguri

সৈকতের পাশে দুলাল, ‘দ্বন্দ্ব’ ক্রমে বাড়ছে জেলা তৃণমূলে 

সৈকত এ দিন বলেন, “যে দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধান সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলবেন দল সৈকতের পাশে নেই, সে দিন আমি বুঝব, দল পাশে নেই। তার আগে, আমি কারও কথায়  কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না।”

যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়।

যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১৮
Share: Save:

সৈকত-বিতর্কে এ বার প্রকাশ্যে চলে এল জেলা তৃণমূলের দ্বন্দ্ব। এক দম্পতিকে আত্মহত্যার ‘প্ররোচনা’র অভিযোগে জড়িয়ে পড়া জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ালেন জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দুলাল দেবনাথ। যিনি সম্প্রতি দলের এক সভায় জেলা সভাপতি মহুয়া গোপের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন।

দুলাল বৃহস্পতিবার বলেন, “সৈকত চট্টোপাধ্যায় দলের সম্পদ। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজনৈতিক চক্রান্ত করছে। আমার মনে হয় না, এটি ব্যক্তিগত বিষয়।” উল্লেখ্য, দু’দিন আগেই মহুয়া গোপ সৈকতের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অভিযোগ প্রসঙ্গটি একেবারেই ‘ব্যক্তিগত’ বলেই মন্তব্য করেছিলেন। এমনকি, এ দিনও তিনি একই অভিমত দিয়েছেন। এ দিকে, দুলালকে পাশে পেয়ে সৈকতও এ দিন সুর চড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “জেলা সভাপতির (মহুয়া গোপ) কথায় আমি কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। উনি ওঁর কথা বলছেন। আমার কাছে দল মানে কোটি কোটি সমর্থক। যে দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধান সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলবেন দল সৈকতের পাশে নেই, সে দিন আমি বুঝব দল পাশে নেই। তার আগে, আমি কারও কথার কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না।” জেলা সভাপতি মহুয়া এ দিন বলেন, “আমি দলের অবস্থানই বলেছি। দম্পতির আত্মহত্যার অভিযোগের বিষয়টি ব্যক্তিগত, রাজনীতির যোগ নেই। তৃণমূলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।”

এ দিকে এ দিন সৈকতকে নিয়ে নতুন বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এ দিন সকালে একটি গাড়িতে (সরকারি কাজে যেতে যে গাড়ি সৈকত ব্যবহার করেন না) চেপে সৈকতকে জেলা পুলিশ সুপারের অফিস থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছে বলে দাবি। আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনা’ দেওয়ায় অভিযুক্ত কেন জেলা পুলিশ অফিসে যাবেন তা নিয়ে শুরু হয় চর্চা। সৈকত অবশ্য দাবি করেছেন, “আমি পুলিশ সুপারের অফিসে যাইনি। যে গাড়ির কথা বলা হচ্ছে, সেটি আমি ব্যবহারই করি না।”

অন্য দিকে, জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খাণ্ডবহালে বলেছেন, “আমি আজ জলপাইগুড়িতে ছিলামই না। আমার সঙ্গে কারও দেখা হয়নি।” সৈকতের ‘অনুগামীদের’ পাল্টা দাবি, চাকরির নাম করে টাকা নেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ও গত বুধবার থানায় এবং জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। পুলিশ তদন্ত করছে। কাউকে ফেরার বা অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেনি। কাজেই যে কেউ যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন বলে দাবি তাঁদের।

বিজেপির ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ের ভাই জেলার শিশুকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্য এবং তাঁর স্ত্রী জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন উপ পুরপ্রধান অপর্ণা ভট্টাচার্য গত শনিবার আত্মহত্যা করেন বলে পরিবারের অভিযোগ। দম্পতির ঘর থেকে ‘সুইসাইড নোট’ও উদ্ধার হয় বলে পুলিশের দাবি। তাতে সৈকত ও তাঁর অনুগামী আর এক পুর প্রতিনিধি সন্দীপ ঘোষ-সহ চার জনের নামে আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পর দিন, রবিবার বিজেপি বিধায়ক জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় সৈকতদের নামে অভিযোগও দায়ের করেন। তার পরে, জেলা তৃণমূল তরফে বিষয়টিকে ‘ব্যক্তিগত’ বলে দাবি করায়. দলে কার্যত একা হয়ে পড়েন সৈকত।

এ দিন জেলার অন্যতম নেতা দুলাল দেবনাথ পাশে দাঁড়ানোয় সৈকত-শিবির অনেকটাই আশ্বস্ত বলে মনে করা হচ্ছে। দুলাল জেলা তৃণমূলের মুখপাত্রও। জেলা সভাপতি এক রকম বলছেন আর মুখপাত্র উল্টো বলছেন, এতে দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়বে না?

দুলালের উত্তর, “দলের মুখপাত্র, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি, কৃষক সংগঠনের সভাপতি হিসেবে যা মনে করি, তাই বলেছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri TMYC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE