Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন ডুয়ার্স

রাত থেকে টানা বৃষ্টি ডুয়ার্স জুড়ে এবং একই সঙ্গে ভুটান পাহাড়ে। এই দুইয়ের ধাক্কায় ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় বিপর্যস্ত হল জনজীবন। কোথাও ট্রেন লাইনের নীচ থেকে সরে গেল মাটি।

ভাঙন: ধুয়ে গিয়েছে লাইনের তলার জমি। বানারহাটে। নিজস্ব চিত্র

ভাঙন: ধুয়ে গিয়েছে লাইনের তলার জমি। বানারহাটে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নাগরাকাটা ও বানারহাট শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫২
Share: Save:

রাত থেকে টানা বৃষ্টি ডুয়ার্স জুড়ে এবং একই সঙ্গে ভুটান পাহাড়ে। এই দুইয়ের ধাক্কায় ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় বিপর্যস্ত হল জনজীবন। কোথাও ট্রেন লাইনের নীচ থেকে সরে গেল মাটি। ফলে সেই লাইনে বন্ধ করে দেওয়া হল ট্রেন চলাচল। কোথাও আবার ঝোরার প্রবল স্রোতে উড়ে গেল অস্থায়ী সেতু। ভেসে গেল ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক।

রবিবার রাত থেকে বৃষ্টির তোড়ে নাগরাকাটা ব্লকের গ্রাসমোড় নন্দু মোড় এলাকায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বালুখোলা ঝোরার জলের তাণ্ডবে শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্সের এই একমাত্র জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

রবিবার সন্ধ্যা থেকে একটানা বৃষ্টি চলেছে এলাকায়। পাহাড় ও ডুয়ার্স জুড়ে ৩০০ মিমির বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে আপাত নির্বিষ ঝোরাগুলিও ফুলেফেঁপে ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়। লুকসান গ্রাম পঞ্চায়েতের এই বালুখোলা ঝোরাও তেমনই। নাগরাকাটা এলাকা জুড়ে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের পূর্ত দফতরের কাজ বেশ কিছু মাস ধরেই চলছে। তাই ঝোরার সেতুগুলি ভেঙে চওড়া করার কাজ হচ্ছে। বালুখোলা ঝোরার মূল সেতুটি তাই বর্ষার আগেই ভেঙে অস্থায়ী পথ তৈরি করে দেওয়া হয়। গত ২৪ মে প্রবল বৃষ্টিতে বালুখোলার জল সেই অস্থায়ী কালভার্ট ভেঙে দেয়। এর পর জাতীয় সড়কে হিউম পাইপ বসিয়ে দিয়ে ফের অস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়। এদিন সেই হিউম পাইপ গুলি তুবড়ে দিয়ে জল সড়ক ধসিয়ে বেড়িয়ে যায়। মালবাজারের মহকুমাশাসক সিয়াদ এন বলেন, “পুনরায় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি না কমায় কাজ হচ্ছে না।’’

এই পরিস্থিতিতে ছোট গাড়ি চলাচলের বিকল্প পথ তৈরি করেছে নাগরাকাটা থানার পুলিশ। কিন্তু বাস, ট্রাক কোনও কিছুই সেই পথে যেতে পারবে না। তাই বাধ্য হয়ে ধূপগুড়ি দিয়ে ঘুর পথে যাতায়াত শুরু হয়েছে।

এ দিন রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দলীয় কাজে আলিপুরদুয়ার থেকে মালবাজারে আসেন। সেই অনুষ্ঠানে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, এসজেডিএ চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীরা ছিলেন। অরূপ বলেন, “এক রাতের বর্ষণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা মোকাবিলায় পূর্ত দফতরের পাশাপাশি সৌরভ, গৌতমবাবুরাও খোঁজ রাখছেন।”

প্লাবিত হাতিনালা হাতিনালার জলে প্লাবিত হল ধূপগুড়ি ব্লকের বানারহাট ও বিন্নাগুড়ি এলাকা। রবিবার রাত থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি চলায় সোমবার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় ওই দুই এলাকায়। ঘর-বাড়ি থেকে শুরু করে প্লাবিত হয় রেল লাইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, মোরাঘাট জঙ্গলের একাংশ। প্রশাসন বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে এলাকায় নৌকা পাঠায়। বিলি করা হয় ত্রাণ ও ওষুধ।

ধূপগুড়ির বিডিও রবি প্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘বানারহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে থাকা রোগীরা আটকে পড়েন। শেষ পর্যন্ত নৌকায় করে রোগী সহ প্রসূতি মা ও শিশুদের বের করে আনা হয়।’’ বিডিও জানান, বন্যাপীড়িতদের শুকনো খাবার, পানীয় জল এবং ওষুধ বিলি করা হয়েছে। তবে দুপুর থেকে জল নামতে শুরু করায় কিছুটা হলেও রেহাই পেয়েছেন মানুষ।

রবিবার রাতে প্রায় ৩০০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয় বানারহাটে। ভুটান পাহাড়েও বৃষ্টি হয়। যার জেরে রাত দেড়টা থেকে বানারহাট ও বিন্নাগুড়ির মধ্যে দিয়ে যাওয়া হাতিনালা ঝোরায় জল বাড়তে শুরু করে। রাত সাড়ে তিনটা নাগাদ হাতিনালা ছাপিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে লোকালয়ে।

বানারহাটের বাসিন্দা সেচ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী দীনেশ্বর প্রসাদ বলেন, ‘‘গত ৪২ বছরে হাতিনালার এমন রূপ দেখেনি। এ বার জল রাস্তা থেকে প্রায় সাত ফুট উঁচুতে উঠে ট্রেন লাইন ছাপিয়ে ঢুকে পড়ে মূল বানারহাট বাজারে।’’ বানারহাট স্টেশনের সুপার প্রদীপ বর্মা বলেন, ‘‘বানারহাটের ১, ২ ও ৩ নম্বর লাইনগুলি জলে তলিয়ে যায়। জলের ধাক্কায় ওই মেন লাইনের তলার মাটি ধসে যায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Water Dooars
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy