ফাইল চিত্র।
ফেব্রুয়ারি মাসে গত পুরভোটেই নবগঠিত হামরো পার্টির উল্কাগতিতে উত্থান দেখেছিলেন পাহাড়বাসী। জিটিএ নির্বাচনে সেই পাহাড় দেখল আরও একটি নতুন শক্তির উত্থান। অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক পার্টি। এই কাহিনি অনীতের উত্থান দিয়ে শুরু হলে তা শেষ হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তথা সেই দলের প্রধান বিমল গুরুংয়ের ‘পতন’ দিয়ে। আর এই ‘শেষের শুরু’ সেই পুরভোটেই। যে নির্বাচনে দাঁতই ফোটাতে পারেনি বিমলের দল। তার পর জিটিএ ভোটে নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন এবং শেষে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে পাহাড়ের রাজনীতি থেকে কার্যত মুছে যেতে বসেছে মোর্চা।
গত বিধানসভা ভোটের ঠিক আগেই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাঁত করেছিলেন বিমল। এর পর চলতি বছরে পাহাড়ে পুরভোটের পর থেকেই সেই সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে। জিটিএ নির্বাচন নিয়ে পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পর থেকেই প্রকাশ্যে সরব হতে শুরু করে মোর্চা। পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে জিটিএ নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা করতে দেখা যায় মোর্চা নেতা বিমল, রোশন গিরিদের। জিটিএ নির্বাচন স্থগিত করার দাবিতে মাঝে আমরণ অনশনেও বসেছিলেন বিমল। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নির্বাচনের বিরোধিতায় ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় মোর্চার তরফে।
পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্ষবেক্ষকদের একাংশ বলেছন, বিমলের সেই সিদ্ধান্তই ‘পতন’ ডেকে এনেছে। অনশন করে পাহাড়ের রাজনীতিতে যে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে চেয়েছিলেন বিমল, তা-ই তিনি হারালেন জিটিএ ভোটে অংশ না নিয়ে। আর সেই সুযোগেই উঠে এলেন অনীত। বিমল যখন শুরু থেকেই পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের দাবিতে নির্বাচনের বিরোধিতা করছিলেন, অনীতও বিমলের দাবিকে কার্যত সমর্থন করে নির্বাচন চাইছিলেন। প্রচারের চমক ছিল না। ছিল না জাঁকজমকের ডঙ্কা বাজানো। বরং পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে ঘুরে দলীয় প্রার্থীদের জন্য ভোটের আবেদন করতে দেখা গিয়েছিল অনীতকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, পাহাড়ে ‘পকেট রুট’-এ অনীতের প্রচারই কামাল করেছে। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ভোটপ্রচার সারলেও অনীতের দূরদর্শিতার কাছে ‘হেরে’ গিয়েছে জিটিএ নির্বাচনের বিজিপিএম-এর ‘প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী’ হামরো পার্টি। নির্বাচনের ফলাফলেও তা স্পষ্ট। জিটিএ-র ৪৫টি আসনের মধ্যে অনীতের ঝুলিতে গিয়েছে ২৭টি আসন। হামরো পার্টি পেয়েছে ৮টি আর তৃণমূল পেয়েছে ৫টি।
এই ফল নিয়ে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সম্পাদক অমর লামা বললেন, ‘‘মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। বিমল গুরুং আর নেই। আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিমল গুরুং রাজনৈতিক ভাবে শেষ হয়ে গিয়েছে। বাস্তব রাজনীতি হবে। আবেগের নয়।’’
দশ বছর আগের যে জিটিএ ভোটে সব ক’টি আসনে জিতেছিল বিমলের দল, তাদের কার্যত মুছে যাওয়া নিয়ে রোশনের কাছে জানতে চাওয়া তিনি অবশ্য এ নিয়ে কোনও উত্তরই দিতে চাননি। মুখ খুলতে চাননি হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ড। তিনি শুধু বলেন, ‘‘কম আসন পেয়ে দুঃখ ঠিকই হচ্ছে। দার্জিলিং কেন্দ্রিক ভোট পেয়েছি শুধু। তবে প্রধান বিরোধী আসনে বসে পাহাড়বাসীর জন্য লড়াই করব।’’
অন্যদিকে, দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি (পাহাড়) শান্তা ছেত্রী বলেন, ‘‘অন্য কোনও দল নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়কে অনেক কিছু দিয়েছেন। এ বার পাহাড়ের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে কিছু দিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy