উদ্যোগী: ভেষজ বাগানে চিকিৎসক বাসবকান্তি দিন্দা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
এক রোগী কাশির চিকিৎসায় চিকিৎসকের কাছে আসেন। রোগীকে দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন চিকিৎসক, সঙ্গে সরকারি বরাদ্দের ওষুধও দিলেন। দিন কয়েক পরে রোগীর বাড়ি গেলেন তাঁর খোঁজ নিতে। সেই সঙ্গে পরামর্শ দিলেন, ‘‘বাড়িতে তুলসি ও বাসক গাছ রাখবেন। একটু কাশি হলে ওই গাছের পাতার রস খেতে হবে।’’ বাড়িতে চিকিৎসককে কাছে পেয়ে সবাই খুব খুশি। এমন করেই ভালবাসার টানে গ্রামে গ্রামে গড়ে তুলেছেন তিনি ‘ভেষজ সুরক্ষা’। কোচবিহারের প্রত্যন্ত নাটাবাড়ির ওই চিকিৎসকের নাম বাসবকান্তি দিন্দা। আদতে মেদিনীপুরের খেজুরির ছেলে বাসব এখন কোচবিহারের নাটাবাড়ির ‘প্রিয় ডাক্তারবাবু’। রোগীরা খুশি হয়ে কখনও তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন লাউশাক, কখনও এঁচোর। চিকিৎসক বলেন, ‘‘রোগী-চিকিৎসকের এমন সম্পর্ক আমার কল্পনায় ছিল। আজ, তা পেয়ে খুব ভাল লাগছে।’’
বাসব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জেবি রায় আয়ুর্বেদিক কলেজ ও হাসপাতাল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। এর পরেই ২০১৩ সালে কোচবিহারে নাটাবাড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক হিসেবে কাজে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে সিনিয়র আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার। ভেলাপেটার কদমতলায় তাঁর চিকিৎসা কেন্দ্র। পরিবার নিয়ে রয়েছেন কোচবিহার শহরের পান্থশালা রোডের ভাড়া বাড়িতে। সেখান থেকেই প্রতিদিন ভেলাপেটা গ্রামে যাতায়াত করেন তিনি। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাঁর চেম্বার। এর পরে গ্রামের এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে নিজের বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে আসে। বাড়ি ফিরে তিনি লিখতে বসেন। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা, গাছেদের গুণ নিয়ে চারটি বই লিখেছেন।
কী করেন গ্রামে গিয়ে? বাসব জানালেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগী দেখেন। কোভিড পরিস্থিতিতে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। কোভিডের আগে প্রতিদিন সেটা ৫০-৬০ জন হত। রোগী দেখা শেষ করে গ্রামে গ্রামে যান তিনি। গ্রামকে ভেষজ সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কাজ করেন। বিভিন্ন গ্রামে তুলসী, কালমেঘ, পুদিনা, ব্রাহ্মী, আয়াপান, পাথরকুচি, ঘৃতকুমারী, নয়নতারা, গুলঞ্চ চাষে উৎসাহ দেন তিনি।
তাঁর চেষ্টায় এক বছরের মধ্যে এলাকায় বাগানের সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজারেরও বেশি। ২০১৯ ও ২০২০ সালে পরপর দু’বার ‘আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসব’ থেকে পুরস্কৃত হন বাসব। বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারাও জানালেন, ‘ডাক্তার খুব ভাল মানুষ, তাঁকে সবসময় পাওয়া যায়।’ কোচবিহার জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, ‘‘এমন চিকিৎসকদেরই বাংলার গ্রামে গ্রামে এখন দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy