সংসারের হাল ধরতে: মায়ের সঙ্গে রুবি বানু। ছবি: সন্দীপ পাল
শীতের সকালে শিলিগুড়ি থেকে মায়ের সঙ্গে জলপাইগুড়িতে এসে পুতুল বিক্রি করার জন্য বসার জায়গার খোঁজ করছিল রুবি বানু। শিলিগুড়ি সামসিয়া হাই মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রুবি। দিনকয়েক ধরে জলপাইগুড়িতে একটি বেসরকারি শিল্পমেলার সামনে বসে পুতুল ও বাচ্চাদের খেলনা মায়ের সঙ্গে বিক্রি করছিল সে। মেলা চত্বরে তেমন বেচাকেনা না হওয়ায় শুক্রবার সকালে জলপাইগুড়ি শহরের দিনবাজার এলাকায় বসার জায়গার খোঁজ করছিল রুবি। দিনবাজারের করলা সেতু সংলগ্ন রায়কত পাড়া ট্র্যাফিক মোড় এলাকায় এসে বসার জায়গার জন্য স্থানীয় দোকানদারদের কাছে অনুরোধ করায়, একটি বন্ধ দোকানের সামনে মা-মেয়েকে বসার ব্যবস্থা করে দেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। করোনা আবহে প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ। স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইন পড়াশোনার সুযোগও নেই রুবির। তাই মায়ের সঙ্গে পুতুল বিক্রি করার পাশাপাশি নিজেই যতটা পারে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। পাশাপাশি চলছে এনজেপি রেলওয়ে ইনস্টিটিউটের মাঠে নিয়মিত দৌড়ের অনুশীলনও।
রুবির মা আনসারা বেগম বলেন, ‘‘স্বামী মহম্মদ রমজান আলি দুই মেয়ে আর আমায় ছেড়ে অনেকদিন আগেই অন্য সংসার পেতেছেন। জলপাইগুড়ি কোর্টে মামলা চলছে স্বামীর সঙ্গে। এনজেপিতে বাপের বাড়িতে দুই মেয়েকে নিয়ে আছি। বড় মেয়ে সোনালি শিলিগুড়ি লালবাহাদুর শাস্ত্রী হিন্দি স্কুলে পড়ে। যত কষ্টই হোক না কেন, দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে চাই।’’ রুবির কথায়, ‘‘উর্দু ও ইংরেজি শিখতে চাই বলে সামসিয়া হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু স্কুলে ক্লাস করতেই পারলাম না। পড়াশোনার সঙ্গেই খেলাধুলোটাও করতে চাই। এনজেপি ইনস্টিটিউটের মাঠে গিয়ে দৌড়াই। ১০০ মিটার এবং ২০০ মিটার দৌড়ে আমি আর দিদি বেশ কয়েকটি মেডেলও পেয়েছি। স্কুল খুলে গেলেই ভাল হত!’’
রায়কত পাড়া মোড়ের এক ওষুধের দোকানের কর্মচারী গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘ছোট্ট মেয়েটি আমাদের বারবার একটু বসার জায়গা দিতে অনুরোধ জানায়। আমরা বসার জায়গা করে দিয়েছি।’’ সামসিয়া হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘আমাদের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে পড়তে আসে। এদের মধ্যে বড় অংশের পড়ুয়ারা প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকেই বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুল খোলাটা খুবই জরুরি এখন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy