আলাপ: বাড়ির দাওয়ায় বসে সৌমেন টুড়ু ও তাঁর মা মাইকো সোরেন জানালেন তাঁদের সমস্যার কথা। ছবি: অমিত মোহান্ত।
পাকা তালের গন্ধে চারদিক ম ম করছে। ভরদুপুরে পিচ রাস্তা পেরিয়ে সীমান্ত লাগোয়া তপন ব্লকের আদিবাসী গ্রাম বাঁশপাড়া তখন প্রায় নিঝুম। রাস্তাতেই দেখা মিলল ঘেমো শরীরে কয়েকটি গরু, বাছুর নিয়ে বাড়ি ফিরছেন আদিবাসী যুবক সৌমেন। পথচলা দেখে বোঝা গেল, চোখে ভাল দেখতে পান না। কথায় কথায় বছর কুড়ির সৌমেন টুডু জানালেন, বিধাননগরের একটি ব্লাইন্ড স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ছেন। ছ’বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর আর পড়াশোনা চালাতে পারেননি তিনি। বাড়িতে বিধবা মা রয়েছেন। চোখে সমস্যা থাকায় তেমন কাজ করতে পারেন না। কোনওমতে একফালি জমিতে ধান ফলিয়ে দিন কাটে। সৌমেন জানালেন, তপশিলি শংসাপত্র নেই তাঁদের। নেই উজালার গ্যাস। হয়নি টিকাও। সরকারি প্রকল্পে ঘরও জোটেনি। জব কার্ডে মাত্র সাত দিনের কাজ পাওয়া সৌমেন টুডুকে তাই রোজ গরু নিয়ে মাঠে যেতে হয়। বাড়ির তালপাতা। মাটির বাড়ির একটি অংশে ত্রিপলের ছাউনি ফুটো হয়ে গিয়েছে। বর্ষার জলে তাই দাওয়া ধুয়ে যায়।
সৌমেনের কথায়, ‘‘ভোটের আগে অনেকেই এসেছিলেন। কিন্তু ভোট পেরিয়ে গেলে আর কেউ খোঁজ নেয় না। বাবার তপশিলি সার্টিফিকেট ছিল না। অনেকবার চেষ্টা করেও পাইনি। নতুন করে দুয়ারে শিবিরে আবেদন করলাম।’’ সৌমেনের মা মাইকো সোরেন জানালেন, উজালা গ্যাসের জন্য আবেদন করার পরেও তাঁরা তা পাননি। এত সমস্যায় নিজের প্রতিবন্ধী শংসাপত্র পুনর্নবীকরণের উৎসাহও হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান সৌমেন। পুরনো শংসাপত্রে তাঁর ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা ছিল বলে জানালেন।
বালাপুর পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে এ বছর একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মাত্র সাত দিন কাজ মিলেছে বলে দাবি করলেন সৌমেন। গ্রামবাসীরা জানালেন, কাজ নেই। গ্রামে ঢোকার মুখে রাস্তা পাকা হয়নি। বর্ষার কাদায় চলা দায় হয়। তবে পানীয় জলের একটি ট্যাঙ্ক বসায় সমস্যা কিছুটা কমেছে। গ্রামের অনেকেই করোনা টিকার প্রথম ডোজ় পাননি বলেও অভিযোগ করেন।
নির্বাচনের পর এলাকায় কেন আসেননি জনপ্রতিনিধিরা? তপনের বিজেপি বিধায়ক বুধরাই টুডুর দাবি, নির্বাচনের পর অনেক জায়গা ঘুরছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই গ্রামে খোঁজ নিতে যাওয়া হয়নি। তবে শীঘ্রই যাব।’’
তপশিলি শংসাপত্র নিয়ে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা জানান, আবেদন করলে নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা হবে। তপনের বিডিও মাসুদ করিম শেখ বলেন, ‘‘সব রাস্তা এক সঙ্গে করা সম্ভব নয়। তবে ধীরে ধীরে অনেক রাস্তাই তো হচ্ছে। ওটাও হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy