রব্বানিকে ক্ষোভ গ্রামবাসীর। নিজস্ব চিত্র
কোথাও প্রশ্ন উঠল সীমান্তের জমি সুরক্ষার। আবার কোথাও আবাস যোজনায় ঘর না পাওয়ার প্রশ্ন। বুধবার গৌড়বঙ্গের তিন জেলায় দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে গিয়ে এমনই নানা প্রশ্নের মুখে পড়লেন দিদির দূতেরা।
এ দিন মালদহের হবিবপুর ব্লকের বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতে দিদির দূত কর্মসূচিতে যোগ দেন রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম নুর। এ দিন দাল্লা মতুয়া মন্দিরে পুজো দিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। এর পরে, দাল্লা গ্রামে গিয়ে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে অভাব-অভিযোগ শোনেন তিনি। আর সেখানেই আবাস যোজনার তালিকায় নাম না থাকা নিয়ে অভিযোগ জানান বাসিন্দারা, বিশেষ করে এলাকার মহিলারা। মৌসম অবশ্য পরে, সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেন। ভগবানপুরে চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় কর্মসূচি ঘিরে তৈরি হল নতুন বিতর্ক। এ দিন হরিরামপুর ব্লকের গোকর্ণ পঞ্চায়েতে গিয়েছিলেন ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতায় দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে অভিযোগ জানালেন দলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার। তার ফলে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জেলায় প্রকট হয়ে পড়ল বলেই তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
হরিরামপুর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি হাতেম আলির অভিযোগ, এ দিন মন্ত্রী নিজের মতো করে কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁকে ওই কর্মসূচিতে নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তিনি মৃণালকে অভিযোগ জানান। মৃণাল বলেন, ‘‘গোষ্ঠী কোন্দলের ব্যাপার নেই। কিন্তু মন্ত্রী নিজের মতো করে কর্মসূচি পালন করেছেন।’’ যদিও , বিপ্লবের পাল্টা দাবি, এই অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘‘দলীয় কর্মসূচি মেনেই কাজ হয়েছে। প্রচুর মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি।’’
বুধবার উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দেবীগঞ্জে ‘দিদির দূত’ ছিলেন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি। সেখানে সীমান্তের জমির সুরক্ষা ও মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বাসিন্দারা। বিএসএফের বিরুদ্ধে হয়রানি সহ নানা সমস্যা নিয়ে মন্ত্রী গোলাম রব্বানিকে পেয়ে ক্ষোভ জানালেন গ্রামবাসী।
প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তর দিনাজপুরে ২২৭ কিলোমিটার জুড়ে সীমান্ত এলাকা। হাজার হাজার বিঘা জমিতে চাষ-বাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন সীমান্তের মানুষ। ভৌগোলিক অবস্থানের জেরে ‘জ়িরো পয়েন্ট’ থেকে কোথাও আধ থেকে এক কিলোমিটার বেড়া দেওয়ার ফলে, ভারতের কৃষিজমির জমির বেশির ভাগটাই চলে গিয়েছে অন্য পারে। ফলে, চাষ করতে সমস্যা হচ্ছে।
বাসিন্দারা এ দিন মন্ত্রীকে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “ভোট এলে, মনে পড়ে আমাদের কথা। কিন্তু আমরা কী ভাবে বাস করি, আমরাই জানি। সীমান্তে ফসল কাটা থেকে বাজার-হাটে, পথ চলতে প্রতি মুহূর্তে বিএসএফের হয়রানির মুখে পড়তে হয়।’’মন্ত্রীকে স্থানীয়েরা বলেন, “ভোট এলে, নেতাদের দেখা পাওয়া যায়। ভোট ফুরোলে, মানুষের সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সে তিমিরেই থেকে যায়।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতারা মন্ত্রীকে জানান, ‘দিদির দূত’ কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিএসএফ অনুমতি দেয়নি। তাই সীমান্ত গ্রাম থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে কর্মসূচি পালন করা হয়। মন্ত্রী এই কর্মসূচি থেকে মহকুমাশাসককে (ইসলামপুর) সে বিষয়ে নালিশ জানান এবং বিএসএফকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করার কথা জানান। মন্ত্রীকে বলেন, “প্রশাসনকে বলেছি। বিএসএফের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগী হতে হল।’’ পাঞ্জিপাড়া বিএসএফের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘হয়রানির অভিযোগ ঠিক না। সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে বিধিনিষেধ থাকে।’’
বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীকে সামনে পেয়ে এ দিন কেউ অভিযোগ জানালেন, নতুনপাড়া থেকে ফাটিপুকুর শ্মশান পর্যন্ত বেহাল রাস্তার, বার্ধক্য ভাতা না মেলার। আবার কারও দাবি আবাস যোজনা নিয়ে। বিধায়ক অবশ্য সকলকে আশ্বাস দিয়েছেন।
‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচির জনসংযোগ চলাকালীন এ দিন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় গিয়ে সেখানকার পরিকাঠামো খতিয়ে দেখলেন উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেনও। এ দিন ইটাহার ব্লকের গুলন্দর ১ পঞ্চায়েতে ওই কর্মসূচি পালন করেন কানাইয়া। এ দিন পদযাত্রা ও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রচার চালান কানাইয়া। সেখানে অনেকেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে পাকা বাড়ি, লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ জানান।
কানাইয়া বলেন, “সবার অভিযোগ নথিভুক্ত করে দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ব্যাঙ্কে নথির সমস্যার জেরে অনেকে বিভিন্ন সরকারি ভাতা পাচ্ছেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy