মিড ডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা। —ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি শিক্ষা দফতর মিডডে মিলের বরাদ্দ সামান্য বাড়িয়েছে। কিন্তু তাতেও কম পড়ুয়া থাকা স্কুলগুলিতে মিডডে মিল রান্না করার অনিশ্চয়তা কাটছে না বলে অভিযোগ। কেন না, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বেশি পড়ুয়া থাকলে টাকার পরিমাণ বেশি হয়। একই খরচে অনেকের রান্না হয়ে যায়। কিন্তু অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাতে গোনা পড়ুয়া। তাদের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য যা বরাদ্দ, তা মিলিয়ে স্কুলে আলাদা করে মিডডে মিলের রান্না করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে পাশের কোনও স্কুলের সঙ্গে এক যোগে রান্নার ব্যবস্থা করতে হয়। শিলিগুড়ি শিক্ষা-জেলার বেশ কিছু প্রাথমিকে এমনই ছবি।
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, শিক্ষা জেলায় ৪০ জনের কম পড়ুয়া রয়েছে ৫০টির বেশি স্কুলে। কোথাও ১০-১৫ জন পড়ুয়াও রয়েছে। প্রাথমিকে অর্থাৎ, প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাথা পিছু পড়ুয়াদের ৭৪ পয়সা করে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৬.১৯ টাকা।স্কুলে ২০ জন পড়ুয়া থাকলে দিনে মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ১২৪ টাকা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, তা দিয়ে রান্নার গ্যাস কিংবা আনাজ, ডিম—কিছুই হবে না।
খড়িবাড়ি ব্লকের খোপালাসি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ২৩ জন। গ্যাসের খরচ কুলোয় না বলে ‘খড়ি’ (কাঠকুটো) দিয়ে কোনও রকমে রান্না করতে হয়। শিলিগুড়ি শিক্ষা-জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দিলীপ রায়ের বক্তব্য, ‘‘রান্নার প্রয়োজনীয় সামগ্রী অগ্নিমূল্য। যতটুকু বরাদ্দ বেড়েছে, তাতে খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয় না।’’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, মিডডে মিল খাতে দ্বিগুণ বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রয়োজন। না হলে, খাবারের গুণমান বজায় রাখা যাচ্ছে না। কখনও পড়ুয়াদের র্ধেক ডিম খাওয়ানো হয়। আনাজ অনেক দিনই দেওয়া সম্ভব হয় না।
হাইস্কুলগুলোর ক্ষেত্রে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৯.২৯ টাকা। সেখানে একটি ডিমের দাম সাড়ে সাত টাকা। চাল, ডাল, আনাজ কেনা হবে কী করে তা ভেবেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে মিডডে মিলের দায়িত্ব নিতে চান না বলে অভিযোগ। নকশালবাড়ি নন্দপ্রসাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নীতীশ ঘোষের কথায়, "আলু, আনাজ থেকে ডাল, ডিমের যা দাম তাতে ছাত্র প্রতি দ্বিগুণ বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রয়োজন ছিল। তা না হওয়ায় পরিমাণ, মান কমছে।"
পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরিচিত দোকান থেকে ধার-বাকিতে জিনিস এনে মিডডে মিল চালু রাখেন। তবে তাঁদের প্রশ্ন, সে ভাবে কত দিন চালানো সম্ভব! শিলিগুড়ি শিক্ষা-জেলার মিডডে মিলের ওসি সত্যজিৎ কুমারের দাবি, ‘‘প্রায় সমস্ত স্কুলেই মিডডে মিলের রান্না হয়। বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সবার সুবিধাই হবে। কোনও স্কুল ধার নিয়ে চালালে, তাদের বিষয়।’’
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির দার্জিলিং জেলা সম্পাদক বিদ্যুৎ রাজগুরু বলেন, ‘‘দ্রব্যমৃল্য বৃদ্ধি আটকাতে পারছে না কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার। যৎসামান্য বরাদ্দ বাড়লে কী করে ভাল খাবার পাবে পড়ুয়ারা?’’ বিজেপির শিক্ষক সেলের শিলিগুড়ির সম্পাদক সঞ্জিত রায় বলেন, ‘‘মিডডে মিলের বরাদ্দ যাতে অন্য খাতে ব্যবহার না হয়, রাজ্য সরকার এবং স্কুলগুলিতেও তা দেখা প্রয়োজন।’’ তৃণমূলের শিক্ষক নেতা সুপ্রকাশ রায় দাবি করেন, "মিডডে মিলের বরাদ্দ অন্য খাতে ব্যবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কেন্দ্রই তাদের তরফের বরাদ্দ আটকে রাখছে। তবে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলে, স্কুলের সুবিধা হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy