মেজাজে: দক্ষিণ খয়েরবাড়ি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাজা। ছবি: সন্দীপ পাল
জঙ্গলের রাজত্ব গিয়েছে! তাতেও রাজকীয় মেজাজ এতটুকু কমেনি। সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ খয়েরবাড়ির পুনর্বাসন কেন্দ্রের ডেরা মিলিয়ে জীবনের দু’দশক পেরিয়েছে। সেই ‘রাজা’র রজত জয়ন্তীরই দিন গুনছে খয়েরবাড়ির পুনর্বাসন কেন্দ্র।
বন প্রশাসনের অন্দরের খবর, দফতরের কর্তারাও নিয়ম করে রাজার খোঁজ নেন নিয়মিত। রাজার ২৫ বছর পূর্তি হলে সেটা ধুমধাম করে পালন করার আলোচনাও চলছে বলে দফতর সূত্রে খবর।
‘রাজা’ ডুয়ার্সের দক্ষিণ খয়েরবাড়ি পুনর্বাসন কেন্দ্রের পুরুষ বাঘ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রাজাকে ২০০৮ সালে সুন্দরবনের ঝড়খালি থেকে ওই কেন্দ্রে আনা হয়। তারপর থেকে সেটি সেখানেই রয়েছে। প্রায় সমসাময়িক সময়ে সার্কাস থেকে উদ্ধার করা আরও বেশ কয়েকটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকেও সেখানে আনা হয়েছিল। ওই বাঘেদের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ‘শিবরাত্রির সলতে’ হয়ে আছে শুধু রাজা। তাই রাজার রজত জয়ন্তী ঘিরে প্রত্যাশা, স্বপ্ন দেখার পারদও চড়ছে। বন দফতরের তরফেও সেবাযত্নে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোচবিহার বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “সেন্ট্রাল জু অথরিটির নির্দেশিকা মেনেই রাজার রক্ষণাবেক্ষন করা হচ্ছে।”
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাজার এখন ২৩ বছর। কিন্তু কী করে জঙ্গলে বেড়ে ওঠা রাজার বয়স জানা গেল? ওই কেন্দ্রের এক বনকর্মীর দাবি, সুন্দরবনের ঝড়খালিতে পেছনের দিকের বাঁ পায়ে কুমিরের কামড়ে জখম হয় রাজা। তার জেরেই জখম বাঘটিকে দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে আনা হয়। ২০০৮ সালে চিকিৎসকরা বাঘটির ওজন, উচ্চতা, দৈর্ঘ্য, শারীরিক সক্ষমতার মতো নানা বিষয় পরীক্ষা করে বয়স নির্ধারণ করেন ১২ বছর। নাম দেওয়া হয় রাজা। ২০২১ সালে তার ২৫ বছর হবে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “সাধারণত জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার গড়ে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে আয়ু বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ বয়সজনিত সমস্যাতেও খাবার, চিকিৎসা থেকে সব সহজেই মেলে। আমরাও রাজার রজত জয়ন্তী পূর্তি দেখতে মুখিয়ে রয়েছি।” পশু চিকিৎসক শেখরেশ ঘোষ বলেন, “বয়স বাড়লে বাঘেদের ক্যানাইন টিথ পড়ে যাওয়া, দৌড়নোর ক্ষমতা কমে যায়। তাতে শিকার করে খাবার সংগ্রহ করা, ছিঁড়ে খাবার খেতেও সমস্যা হয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রে ওই সমস্যা থাকে না। টুকরো মাংস সহজেই চিবিয়ে খেতে পারে। জঙ্গলে খাবার না পাওয়ার অপুষ্টির আশঙ্কা থাকে না। সবমিলিয়ে জঙ্গলের পরিবেশের তুলনায় আয়ুও বাড়তে পারে। রাজার ২৫ বছর পূর্তি দেখতে চাই। চাইছি ওর আরও দীর্ঘায়ুও।”
বন কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, গরমে দিনে ২ থেকে ৩ বার স্নান করে রাজা। দৈনিক প্রায় ৮ কেজি মাংস খায়, যার অর্ধেক হাড়হীন। কেটে দিতে হয় নখ। সপ্তাহে একদিন উপোস। শুধু জল আর গ্লুকোজে চলে। সবটাই রুটিন মেনে। কারণ পান থেকে চুন খসলেই যে মেজাজ বিগড়োয় রাজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy