খোলা গভর্নমেন্ট কলোনি বাজারও। নিজস্ব চিত্র।
সকাল ১০টা ১৫
মকদমপুর বাজার
প্রশাসনিক বিধি অনুযায়ী সকাল ১০টায় আনাজ, মাছের বাজার বন্ধ করার কথা। কিন্তু মকদুমপুর বাজারে তার পরে গিয়ে দেখা গেল চলছে আনাজ বেচাকেনা। মাছ, মাংস বিক্রি হচ্ছে দেদার। দূরত্ববিধি নেই। একাধিক ক্রেতার মুখে নেই মাস্ক। আর, বেশির ভাগ মাছ ও আনাজ ব্যবসায়ীর মাস্ক থুতনির নীচে, গলায় ঝুলছে। তবে আচমকাই ১০টা ২০ নাগাদ ইংরেজবাজার থানার একদল পুলিশ, সিভিককর্মী, পুরসভার কয়েক জন বাজারে ঢুকলেন। দোকান বন্ধের জন্য চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন। কয়েক জনকে ধমকালেন। আনাজ ব্যবসায়ীরা তড়িঘড়ি পসরা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কাজ শুরু করলেন। ভাব এমন, যেন তাঁরা দোকান বন্ধ করতেই যাচ্ছিলেন! পুলিশের ভয়ে গলা বা জামার পকেট থেকে মাস্ক উঠল মুখে। তবে, তখনও মাছ ও আনাজ বিক্রি করে চলায় একাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ওজন মাপার যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করলেন পুলিশকর্মীরা।
সকাল ১০টা ২০
কাজি আজহারউদ্দিন পুরবাজার
ইংরেজবাজার শহরের স্টেশন রোড। গলি দিয়ে পৌঁছতে হয় সেই পুরবাজারে। বাজারে ঢোকার মুখ জবরদখলে সরু। গলির পাশেই আনাজের পসরা সাজিয়ে বসে পঞ্চাশোর্ধ তিন মহিলা। দু’জনের মুখে মাস্ক নেই। দোকান বন্ধের সময় কখন? প্রশ্ন শুনেই সটান জবাব, বাজারের মধ্যে গিয়ে দেখুন, বুঝতে পারবেন। বাজারের ভিতরে তখন ভিড়ে গমগম করছে আনাজ থেকে মাছের দোকান। ক্রেতা-বিক্রেতা অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক নেই। যদিও সকাল ১০টাতেই আনাজ ও মাছ বাজার বন্ধের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ওই বাজারের পাশেই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস। ওই অফিসেরই দুই আধিকারিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সকাল ১০টা ৩৫
২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি বাজার
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে নামতেই ডান ও বাঁদিকে রাস্তার দু'পাশে একাধিক ব্যবসায়ী আনাজের পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন। প্রায় সকলের মাস্ক থুতনির নীচে। জাতীয় সড়কের ধার ঘেঁষেই মাছ বাজার। সেখানেও তখন জনাদশেক মাছ ব্যবসায়ী চুটিয়ে মাছ বিক্রি করে চলেছেন। তাঁদেরও মাস্ক গলায়। পুলিশ বা নজরদারি দলের দেখা নেই। আশপাশের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের দাবি, এই বাজারে প্রশাসনের নজরদারি নেই। কেউ-ই আসে না। মাস্ক কেন গলায় ঝুলে? এক মাছ দোকানি বলেন, সবসময় মুখে রাখলে অস্বস্তি হয়। তা ছাড়া মাছের দাম বললে ক্রেতারা ভাল করে শুনতে পান না। সেই কারণে মুখের নীচে নামিয়ে রাখতে হয়।
সকাল ১০টা ৩৬
৩২০ মোড় কোঠাবাড়ি বাজার
ফুল-বেলপাতা, পান-কলা প্রায় শেষ। তবুও বন্ধ হয়নি দোকান। কখন বন্ধ হবে দোকান? ফুল বিক্রেতার জবাব, ‘‘প্রশাসন থেকে বলে গিয়েছে ১০টার মধ্যেই সব বন্ধ করতে হবে। আমার কাজও শেষের দিকে। তবে এখনও আনাজ, মাছের কোনও দোকান বন্ধ হয়নি। তাই আমার দোকানও খোলা রয়েছে। কিছু বাড়তি যদি বিক্রি হয়।’’ এরই মধ্যে এক আনাজ ব্যবসায়ীর দাবি, এ দিন সকাল থেকেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সময়ে পসরা সাজাতে পারেনি। তাই সময়ের মধ্যে দোকান গোটানোও হয়নি।
সকাল ১০টা ৫০
রথবাড়ি বাজার
ভিড় এড়াতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বসানো হয়েছে বাজার। পুলিশ টহলদারি দিয়ে জাতীয় সড়কের উপরের বাজার তুলে দিয়েছে। তবে সড়ক থেকে নেমে গলি দিয়ে মাছ বাজারে ঢুকতেই বদলে গেল ছবি। ভিড় করে চলছে মাছ-কেনা বেচা। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। অনেকের তা ঝুলছে থুতনিতে। ছবি তুলতে দেখেই ব্যাগ থেকে মাস্ক বের করে পরে ফেললেন কয়েক জন মাছ বিক্রেতা। মাছ বাজারের পাশেই রয়েছে আনাজের দোকান। সেগুলিতেও সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চলছে কেনাবেচা।
বেলা ১১টা ২০
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন বাজার
সকাল দশটা পর্যন্ত আনাজ বিক্রির কথা। কিন্তু এই বাজারে এলে কেউ বুঝবেন না, এমন কোনও বিধি লাগু হয়েছে। তখনও আনাজ নিয়ে বসে দোকানিরা। মহিলা দোকানিই বেশি। কয়েক জনের মাস্ক রয়েছে, বেশিরভাগই মাস্ক-হীন। ক্রেতাদেরও একাংশের মুখে মাস্কের কোনও বালাই নেই, কারও মাস্ক ঝুলছে গলায়। সামাজিক দূরত্ববৃদ্ধি উড়িয়ে দেদার চলছে বেচাকেনা! দোকান বন্ধের কথা কখন? এক মহিলা আনাজ দোকানি বলেন, ‘‘গরিব মানুষ। আনাজ বিক্রি করেই সংসার চলে। বৃষ্টি-বাদলের দিন, ক্রেতা কম। সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘন্টায় বেচাকেনা করে সংসার চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে দুপুর পর্যন্ত বসে থাকি।’’ তিনি আরও বললেন, এই বাজারে প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই। তবে, ওই সময় কিন্তু সেখানকার মাছের বাজার একেবারে সুনসান।
জেলা পুলিশ সুপার অলক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘পুলিশ সমস্ত বাজারেই নজরদারি করছে। তার পরেও অভিযোগ এলে অবশ্যই দেখা হবে।’’
দেখলেন: জয়ন্ত সেন ও অভিজিৎ সাহা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy