অভাবেই দিন কাটছে বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র
দুপুরের রোদের তেজ তখনও বেড়ে চলেছে। টিন ও পাটকাঠিতে তৈরি বাড়িটার দাওয়ায় আলুথালু হয়ে বসে গৃহবধূ প্রভাতী বর্মণ। পাশেই একটি কাঠের ছোট্ট পিড়িতে বসে স্টিলের থালায় ভাত খাচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সাগর। আরেক ছেলে পবিত্র মায়ের আচল ধরেই বসে। ভাতের গামলা হাতে একটু দূরেই বৃদ্ধ নির্মল। প্রভাতীর শ্বশুর। গৃহবধূ জানালেন, তাঁর স্বামী বিশ্বজিৎ গুজরাতে শ্রমিকের কাজ করেন। লকডাউনে ফিরতে পারেননি। তাই দুই ছেলে, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে অথৈ জলে তিনি। তাঁর কথায়, “দু’দিন আগে দু’কেজি করে চাল ও আলু পেয়েছিলাম সাহায্যে। তা-ই এখন আমাদের খাবার। কাল কী হবে, জানি না। এ ভাবে আর কতদিন?”
পাশেই অন্য এক বাড়িতে পরিচারিকার কাজ চলে গিয়েছে পুণ্যি বর্মণের। স্বামী বাপি ডেকোরেটর্সে শ্রমিকের কাজ করতেন। কাজ চলে গিয়েছে তাঁরও। ওঁদের ডিজিটাল রেশন কার্ড হয়নি। তাই রেশনেও মেলেনি কিছু। কার্যত অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। পুণ্যি বলেন, “ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কী ভাবে যে কাটাচ্ছি, আমিই জানি। কেউ খোঁজ নেয় না। কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় না।” ছলছল চোখে বলে ওঠেন, “হামার গুলার বাঁচি থাকায় কষ্টের।” কোচবিহারের ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের তোর্সা নদী চরে একটি গ্রামে এমনই ছবি ঘরে ঘরে। করোনা-আতঙ্ক ততটাও গ্রাস করতে পারেনি তাঁদের, যতটা না করেছে খাবার জোগাড়ের চিন্তা। গ্রামেরই কয়েকজন প্রবীণ মানুষের প্রশ্ন, টেলিভিশনে ও অনেকেরই মুখে শুনছি মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী গরিব মানুষের জন্য অনেক কিছু দেওয়ার কথা বলেছেন। কই, কিছুই তো পাচ্ছি না!
গ্রামে অন্তত তিন শতাধিক পরিবারের বাস। অধিকাংশ মানুষ ক্ষুদ্র কৃষক। বাকি প্রায় সকলেই দিনমজুরের কাজ করেন। কেউ পরিচারিকা, কেউ রাজমিস্ত্রির সহকারী, কেউ গাড়ির চালক বা খালাসির কাজ করেন। কেউ আবার কাঠ চেরাইয়ের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। গোটা গ্রামে এখন কর্মহীন সবাই। অনেকেরই অভিযোগ, প্রশাসন-সরকার তো নয়ই, তাঁরা যে যেখানে কাজ করতেন, সেখান থেকেও আর কেউ খোঁজ নেয় না। এক গৃহবধূর কথায়, “স্বামী একটি কারখানায় কাজ করতেন। এখন সেখানে গিয়ে বসে থাকলেও মালিক তাকিয়ে দেখেন না।” আর এক জনের কথায়, “এক বাড়িতে মাসিক তিন হাজার টাকায় কাজ করি। লকডাউনে যেতে নিষেধ করেছে। এই সময়ের কোনও টাকাও দেবে না বলে জানিয়েছে।”
ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা রমা বর্মণের বক্তব্য, “গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে যা সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল, দিয়েছি। এর পরেও সকলকে অনুরোধ করছি, এই মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy