বাগ মানছে না চোখের জল। আলিপুরদুয়ারে। নিজস্ব চিত্র
কারও স্ত্রী পঙ্গু অবস্থায় ঘরে পড়ে রয়েছেন। কারও মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। জমি থেকে ধান তুলতে না পারায় গোটা বছর সংসারে ভাতের জোগান হবে কী করে, তা ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছেন না কেউ কেউ। অথচ, এত সমস্যা সত্ত্বেও লকডাউনের জেরে তাঁদের কারওরই বাড়ি ফেরার উপায় পর্যন্ত নেই। যার জেরে আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন হিমঘরে কাজ করতে এসে এই মুহূর্তে কার্যত দিশেহারা অবস্থা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণবঙ্গে বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা কয়েক হাজার শ্রমিকের।
প্রশাসন সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ার জেলায় মোট ১১টি হিমঘর রয়েছে। মার্চ মাসের শুরুর দিকে যে হিমঘরগুলিতে আলু রাখার কাজ শুরু হয়। বছরের পর বছর ধরে যে কাজ মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরাই করে থাকেন।
এ বারেও যার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এ বার হিমঘরে আলু রাখার কাজ যখন মাঝপথে, তখনই গোটা দেশের সঙ্গে রাজ্যেও লকডাউন শুরু হয়। যার জেরে বাড়ি যাওয়া আটকে গিয়েছে কয়েক হাজার শ্রমিকের।
আলিপুরদুয়ারের একটি হিমঘরে কাজ করতে এসে আটকে পড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা গুরুপদ মাইতি। তাঁর কথায়, “হিমঘরে কাজ শেষ হলেই বাড়ি ফিরে জমি থেকে ধান তুলতে শুরু করি। কারণ ওই জমির ধানের উপরেই গোটা বছর আমাদের নির্ভর করে। কিন্তু এবার বাড়ি ফিরতে না পারায় জমির ধান জমিতে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।”
ওই জেলারই কাকদ্বীপের কালীপদ রায় কিংবা মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার আব্দুল শেখ আরও বেশি সমস্যা। এর মধ্যে কালীপদর স্ত্রী বাড়িতে পঙ্গু অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। আর আব্দুলের মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। অথচ, দু-জনের কারও বাড়ি ফেরার উপায় নেই।
পুরুলিয়ার সাধুচরণ মাহাতো বলেন, “আমি এখানে আটকে। ফলে সংসার চালাতে বাড়ির লোকেরা বাধ্য হয়ে একের পর এক ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন।”
হিমঘরের শ্রমিকদের অভিযোগ, একমাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা আলিপুরদুয়ারে আটকে রয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হলে এতদিন উপসর্গের দেখা মিলত। কিন্তু তা না হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন তাঁদের বাড়ি ফেরাতে কোনও ব্যবস্থাই করছে না।
নর্থ বেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের আলিপুরদুয়ার জেলা আহ্বায়ক ত্রিদিবেশ দাস বলেন, শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “শ্রমিকদের এই সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, তেমন ব্যবস্থা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy