হতশ্রী: (উপর থেকে) খাবার, চাদর, ছাদের এই অবস্থা। নিজস্ব চিত্র।
নার্সিংহোম, নাকি পর্যটন আবাস! শিলিগুড়ির কিছু ক্ষেত্রে করোনা রোগী ভর্তি করাতে গিয়ে শয্যার দরদস্তুর শুনে এমনটাই মনে হয়েছে অনেক পরিবারের। তাঁরাই জানাচ্ছেন, প্রথমেই প্রশ্ন করা হয়— কেবিনে রাখবেন রোগীকে, না ডিলাক্সে? বাজেট কম হলে সেমি-কেবিন, কোভিড ওয়ার্ডের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি ওই পরিবারগুলির। আর মূল্য? রোজকার শয্যা প্রতি ভাড়া ৪-১০ হাজার টাকা। ওই সব পরিবারের দাবি, এ ভাবে কোভিড রোগীদের আইসোলেশনে রাখার জায়গা বলে লক্ষ, লক্ষ টাকা রোজগার করছে নার্সিংহোমগুলি। এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ রয়েছে খাবারের মান এবং অন্য পরিষেবা নিয়েও। করোনা আক্রান্তদের পরিবারগুলি প্রশ্ন তুলেছে, টাকাই যদি দিতে হয় তবে পরিষেবা এত নিম্নমানের কেন হবে? একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, স্বাস্থ্য দফতর কী ব্যবস্থা নিচ্ছে এদের বিরুদ্ধে?
নার্সিংহোমগুলির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানানো হচ্ছে, সাধারণ সময়ে কিন্তু এই সব কেবিন, ঘর বা শয্যার দৈনিক ভাড়া দুই, আড়াই বা খুব বেশি হলে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা থাকে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘এ ভাবে শয্যা ভাড়া এবং অন্য বিষয়গুলো নিয়ে অভিযোগ উঠছে। এবার থেকে বিভিন্ন নার্সিংহোম ঘুরে দেখব আমরা। প্রয়োজন মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’ রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এসব ক্ষেত্রে দর বেঁধে দেওয়া দরকার।
রাজগঞ্জের একটি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল সংযুক্তা মিত্রের ভাই শিলিগুড়ির খালপাড়ার নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন। অভিযোগ, চিকিৎসার নামে তাঁর ভাইকে একটি ঘরে কার্যত আটকে রেখে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বিল করা হয়েছে। নিয়মিত ভিডিয়োকল না করা, কিছু জানতে চাইলে চিকিৎসকদের কথা না বলার মতো অভিযোগও রয়েছে। তার সঙ্গে আছে রোগী মুখে খেতে পারবেন বলা সত্ত্বেও তাঁকে কার্যত জোর করে রাইসল টিউব লাগিয়ে খাওয়ানোর মতো নালিশ। সংযুক্তার অভিযোগ, ‘‘চিকিৎসকেরা ঠিকমত দেখা করেননি, কথা বলেননি। কালো কাপড় দেওয়া ছোট ঘরের মধ্যে রেখে চিকিৎসার নামে মোটা টাকা বিল করা হয়েছে।’’
ওই নার্সিংহোমেই এইচডিইউ-তে করোনা রোগীদের জন্য যে খাবার দেওয়া হয়, বিছানার চাদরের যা অবস্থা বা ঘরের যে বেহাল দশা, তাতে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের তরফ থেকে প্রচুর ক্ষোভ-নালিশ রয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, এই বিভাগে এক একটি শয্যার দৈনিক ভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকা। অথচ পরিষেবা নিম্নমানের।
এই চিত্র শহরের একাধিক নার্সিংহোমের। অনেক জায়গায় সেমি-কেবিন, সেমি-ডিলাক্স রুমে ২ জন করে রোগী থাকেন। রোগীদের পরিবারের দাবি অনুযায়ী, এক একটি ঘর থেকে দৈনিক ১০-২০ হাজার টাকা শয্যার ভাড়া বাবদ বিল করা হচ্ছে। বণিকসভা সিআইআই-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান (নর্থ) সঞ্জিত সাহার অভিযোগ, তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন যে নার্সিংহোমে, সেখানে পাইপলাইন থেকে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ত। শৌচাগারের কল লিকোপ্লাস্ট দিয়ে আটকানো থাকত। কেবিনের শয্যায় চাদর সাত দিনে একদিন পাল্টানো হয়েছিল। সঞ্জিতবাবু কথায়. ‘‘কেবিন বলে মোটা টাকা নিচ্ছে নার্সিংহোম। অথচ ঘরের পরিষেবা যা দিয়েছে, তাতে রাতের ঘুম উড়িয়ে দেবে। খাবারের মান খুবই খারাপ।
এমনই একটি নার্সিংহোমের কর্ণাধার নরেশ সিংলা বলেন, ‘‘অনেক সময় মিথ্যে অভিযোগ হচ্ছে। খরচ কিছু তো লাগবেই। রোগী কোথাও জায়গা না পেলে আমরা জায়গা দিচ্ছি। সব রোগীর চাহিদা তো পূরণ করতে পারব না। সাধ্য মতো চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy