Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
স্কুলঘরে অন্ধকার
School students

ভিন্ রাজ্যেও পাড়ি দিচ্ছে ‘স্কুলছুটরা’

পাঠ-শালার পাট চুকেছে বছর দেড়েক। তাতেই বদলে গিয়েছে প্রান্তিক পরিবারের পড়ুয়াদের জীবন

আনাজ বেচছে রহিম শেখ, । মালদহে।

আনাজ বেচছে রহিম শেখ, । মালদহে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২১ ০৬:৫২
Share: Save:

যেতে পারি, তা হলে কেন যাব না?

ডাক উঠছে মাছের। ‘একশো, একশো, একশো, একশো চার’। পাশেই দাঁড়িয়ে এক ছোট্ট কিশোর। দামদরের ফয়সালা হতেই কাজ শুরু ওর। একটু মাছ তুলে দেওয়া, গুছিয়ে দেওয়া। কাজ শেষে কিছু টাকা পেয়ে খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার মুখ। কোন ক্লাসে পড়িস? জিজ্ঞেস করতেই মুখ তুলে তাকায় সে— ‘ক্লাস সেভেন’। পড়া বাদ দিয়ে এই কাজে কেন? “স্কুল তো বন্ধ। কাজ না করলে খাওয়া জুটবে না।” ছোট্ট ছেলের উত্তরে সেকেন্ড সময়ের জন্য সবাই স্থির হয়ে যায়। পরক্ষণেই আবার সবাই ব্যস্ত নিজের কাজে। ছেলেটি ছুট দেয়। আর কিছু জানাতে চায় না সে।

কোচবিহারের মাছ বাজারে কাজ করা ওই কিশোরই শুধু নয়, গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই এখন দিনমজুর, কেউ কেউ পাড়ি দিয়েছে ভিন্ রাজ্যেও। তাদেরই এখন প্রশ্ন, যেতে যদি পারি, তা হলে যাব না কেন?

বালুরঘাট ব্লকের অমৃতখণ্ড সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সঞ্জয় ওরাওঁ, নিখিল বাস্কে, প্রতাপ বর্মণ এখন রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে জোগাড়ের কাজ করে। সঞ্জয়দের কথায়, “পড়া ছেড়ে দিয়েছি। লেবারের কাজ করে সংসারে টাকা দিই।” ওঁদের বাবা-মায়েদের কেউ দিনমজুর, কেউ রিকশা চালিয়ে বা লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার টানেন। করোনা বিধিনিষেধে অভিভাবকদের অনেকের রোজগার নেই। দিন কয়েক আগেই ইয়াসের প্রভাবে মাঠে বোরো ধান কাটতে নেমে পড়েছিলেন কুমারগঞ্জের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া জাকির মণ্ডল, বিশ্বনাথ সরকারেরা। দু’শো টাকা করে দু’দিনে ৪০০ টাকা রোজগারের পর এখন হাত ফাঁকা। বিধিনিষেধ কাটলেই তাঁরা ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

বিড়ি বাঁধছে চুমকিরা। মালদহে। নিজস্ব চিত্র

বিড়ি বাঁধছে চুমকিরা। মালদহে। নিজস্ব চিত্র

সাইকেলে কখনও আনারস, কখনও আবার মৌসম্বি নিয়ে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ফেরি করে রহিম শেখ। মালদহের ইংরেজবাজারের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা সে। জহুরতলা হাজি মহম্মদ হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বিড়ি বেঁধে সংসারের হাল ধরেছে নবম শ্রেণির পড়ুয়া, মালদহের বৈষ্ণবনগরের ভাঙন কবলিত দুর্গারাম টোলা গ্রামের চুমকি মণ্ডল। ভাঙনে ভিটে-মাটি হারিয়েছে সে। বাবা মারা গিয়েছেন। মা-ও অসুস্থ। তাই রাতদিন এক করে বিড়ি বেঁধে চলেছে চুমকি। পড়াশোনা হচ্ছে? চুমকি জানায়, “বিড়ি বাঁধব, না পড়াশোনা করব? বিড়ি না বাঁধলে উনুনে হাঁড়ি চড়বে না।” চুমকির গ্রামেই রয়েছে চায়না, মৌসুমীদের মতো অনেক স্কুল পড়ুয়া। তারাও বিড়ি শ্রমিক। রহিম জানায়, “এ বছর পরীক্ষা হবে না। পাশ হয়ে যাব। তাই পড়াশোনা ছেড়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফল ফেরি করছি।”

আলিপুরদুয়ার জেলার বেশ কিছু জায়গায় উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের মধ্যে কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। জলদাপাড়া লাল্টুরাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রাণতোষ পাল বলেন, “বাড়িতে অভাবের কারণে আমাদের স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের কয়েক জনকে কাজে নামতে হচ্ছে। অনেকে কাজের খোঁজে কেরল বা অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছি। বুঝিয়েসুজিয়ে ছেলেদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।”

(প্রতিবেদন: নমিতেশ ঘোষ, নীহার বিশ্বাস, অনুপরতন মোহান্ত, গৌর আচার্য, পার্থ চক্রবর্তী, অভিজিৎ সাহা)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in North Bengal School students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy