Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

কার্ফু ভেঙে মানবতার পাঠ দিলেন সঞ্জয়

সঞ্জয় বলেন, ‘‘করোনা রুখতে কার্ফু তো মানতে হবেই। কিন্তু তা হলে ওঁকে যে না খেয়ে থাকতে হত। তাই চলে এলাম।’’

পাশে: তামিলভাষী মহিলার সঙ্গে সঞ্জয়। নিজস্ব চিত্র

পাশে: তামিলভাষী মহিলার সঙ্গে সঞ্জয়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৫:৩৫
Share: Save:

প্রায় ন’মাস আগে তিনি এসেছিলেন। তারপর থেকে তামিলভাষী ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধার ঠাঁই হয়েছে মালদহের রথবাড়ি নেতাজি মার্কেটেই। দিনভর সেখানে ঘুরে বেড়ান। রাতে কখনও কারও দোকানের সামনে বা বাজারের চাতালেই ঘুমিয়ে পড়েন। বলতে পারেন না নাম-ঠিকানা কিছুই। নেতাজি মার্কেটের ব্যবসায়ীরাই তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ‘জনতা কার্ফু’-এর জন্য রবিবার নেতাজি মার্কেটের সমস্ত দোকানপাট সব বন্ধ। আসেননি ব্যবসায়ীরাও, খোলেনি দোকান। এমন দিনে তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এলেন নেতাজি মার্কেটের এক ওষুধ ব্যবসায়ী সঞ্জয় দে। বাড়ি থেকে রান্নাকরা খাবার এনে ওই বৃদ্ধাকে খাওয়ান তিনি। শুধু তাই নয়, রাতের জন্য শুকনো খাবারও দিয়ে গিয়েছেন সঞ্জয়। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নেতাজি মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ী, জেলার বণিকমহল।

সঞ্জয় বলেন, ‘‘করোনা রুখতে কার্ফু তো মানতে হবেই। কিন্তু তা হলে ওঁকে যে না খেয়ে থাকতে হত। তাই চলে এলাম।’’

শহরের রথবাড়িতে রয়েছে নেতাজি মার্কেট। বাসিন্দারা জানালেন, বছর ষাটেকের এক তামিলভাষী মহিলা প্রায় ৯ মাস আগে এই বাজারে থাকতে শুরু করেন। তামিল ভাষা জানেন এমন লোকজনকে ডেকে এনেও ওই মহিলার নাম, ঠিকানা জানার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু তিনি কিছুই জানাতে পারেননি। রাতে তাঁর যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য নেতাজি মার্কেটে রাত পাহারার দায়িত্বে থাকা নৈশ প্রহরীদের দেখভাল করতে বলেছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরাই তার খাবারের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এ দিন ছিল ‘জনতা কার্ফু’। ফলে এই মার্কেটের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীরাও কেউ আসেননি। যদিও তাঁর কথা ভুলে যাননি সঞ্জয়।

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের না হয় চলে যাবে, উনি কী খাবেন? আর আজ আবার ‘জনতা কার্ফু’ থাকায় হোটেল বন্ধ, তাই বাড়ি থেকেই খবার আনলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুনছি সোমবার ২৭ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন চলবে। এ ক’দিনও তাই খাবার নিয়ে আসব।’’

নেতাজি মার্কেটের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী মনোজ সাহা বলেন, ‘‘সঞ্জয়কে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। একে অপরের পাশে দাঁড়ানোটাই আমাদের কর্তব্য, কিন্তু অনেক সময় আমরা সেটা ভুলে যাই। সঞ্জয় সেটাই ওঁর কাজে করে দেখালেন।’’ মালদহ মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, ‘‘সঞ্জয়ের এই মানবিকতাকে আমরা কুর্নিশ জানাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Janta Curfew
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE