Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Siliguri

বৈধ ও অবৈধ নির্মাণের জটিল ধাঁধা শিলিগুড়িতে, বিতর্ক

শহরকে যানজট মুক্ত ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে প্রথমেই ফুটপাতের দোকানিদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে শিলিগুড়ি পুরনিগম।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:১৫
Share: Save:

দফায় দফায় বোর্ড মিটিংয়ে পুরনিগম এলাকায় অবৈধ নির্মাণ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা। কিন্তু বাস্তবে তার প্রভাব প্রায় নেই বললেই চলে। একদিকে শহরের ফুটপাত দখল মুক্ত করা থেকে শুরু করে সরকারি জমিতে দোকান উচ্ছেদ করছে পুরনিগম। অন্য দিকে ,শহরের অলিগলিতে বাড়ছে অবৈধ নির্মাণ। এক দিকে সরকারি জমিতে দোকান তৈরি অবৈধ বলে দাবি করছে পুরনিগম। অন্যদিকে সেই দোকানেরই বৈধ কাগজ দেওয়া হচ্ছে। মিলছে বিদ্যুৎ থেকে পানীয় জল। উল্টো দিকে, শহরের প্রাণকেন্দ্রে বেড়ে উঠছে অবৈধ নির্মাণ। যার বিরোধিতা করছেন খোদ শাসক দলের কাউন্সিলর থেকে বোরো কমিটির চেয়ারম্যানেরা। তার পরেও নেওয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। যদিও মেয়রের বক্তব্য, ‘‘আইনের আওতায় থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সব নির্মাণ একবারে ভাঙা সম্ভব নয়!’’

শহরকে যানজট মুক্ত ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে প্রথমেই ফুটপাতের দোকানিদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে শিলিগুড়ি পুরনিগম। তবে তা শুধুমাত্র একটি এলাকাকে কেন্দ্র করে। শহরের প্রধান ব্যবসায়িক স্থান হিলকার্ট রোড ও সেবক রোডের ক্ষেত্রে তা আপাতত কার্যকর হয়নি। পাশাপাশি সরকারি জমিতে তৈরি দোকান বা অবৈধ নির্মাণ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে পুরনিগমের পক্ষ থেকে। যদিও সেই সব দোকানের প্রয়োজনীয় নথি রয়েছে। দোকান চালাতে গেলে প্রথমেই দরকার পুরনিগমের ট্রেড লাইসেন্স। ব্যবসায়ীদের দাবি, তা তাদের রয়েছে। কিন্তু তা মিলছে কী করে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।

বুধবার শিলিগুড়ির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় পূর্ত দফতরের জমির উপর গড়ে উঠা অবৈধ নির্মান ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। দোকানদার সঞ্জয় শর্মা বলেন, ‘‘কুড়ি বছরের অধিক সময় ধরে এই জমির উপরেই দোকান। গতকাল রাতে শুধুমাত্র একটি নোটিস জারি করে আজ তা ভেঙে দেওয়া হল। অবৈধ হলে পুরনিগম কেন ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছে? কেন কর আদায় করছে আমাদের থেকে? এ ভাবেই বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়ার কী মানে!’’ আর এক দোকানি মুন্না শর্মা বলেন, ‘‘বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ভাঙতে হলে গোটা শিলিগুড়ি ভাঙতে হয়। শুধুমাত্র ফুটপাতের কয়েকটি দোকান আর আমাদের মতো দোকান ভেঙে কি অবৈধ নির্মাণ রোধ করতে পারবে পুর নিগম? অবৈধ দোকান বলে দাবি করছে পুরনিগম, আবার বৈধতার কাগজও তারাই দিচ্ছে।’’

এ দিকে, অভিযোগ, শহরের প্রাণকেন্দ্র হিলকার্ট রোডে একের পর এক অবৈধ নির্মাণ বেড়েই চলছে। খোদ শাসক দলের কাউন্সিলর বলছেন, অবৈধ বহুতল নির্মাণ নিয়ে মেয়র একাধিক বার ভাঙার নির্দেশ জারি করেছে। ‘টক টু মেয়রে’ও একাধিক বার ফোন গিয়েছে। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। অবৈধ নির্মাণের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিলকার্ট রোডের উপর তৈরি এক বহুতল। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এক বহুতলকে কেন্দ্র করে অভিযোগও জমা পড়েছে বিভিন্ন দফতরে।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর কমল আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমি একাধিক বার আওয়াজ তুলেছি আমার ওয়ার্ডের এই অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে। পুরনিগম থেকে একাধিক বার নোটিস জারি করা হয়েছে। মেয়র সাহেব অ্যাকশনের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও অ্যাকশন হয়নি। এই বিল্ডিংটি একবার ভাঙাও হয়েছিল পুরনিগম থেকে। কিন্তু তার পর আবার তারা নির্মাণকাজ শুরু করে। পার্কিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। সঠিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। কিন্তু বড় বড় রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাঙ্ক তা ভাড়া নিচ্ছে৷’’

অন্যদিকে বিল্ডিং মালিক রাজেশ্বর গুপ্ত জানাচ্ছেন, তাঁর নির্মাণ অবৈধ নয়। তাঁরই দাবি, তৃণমূলের এক নেতা ১৫ লক্ষ টাকা চেয়েছে তাঁর অবৈধ নির্মাণ বৈধ করে দেওয়া জন্য। বলেন, ‘‘আমার নির্মাণ অবৈধ নয়। শ্রমিকরা এমনি উপরে বসে রয়েছে। তাতে নির্মান কাজ চলছে না। আমাদের এলাকারই এক তৃণমূল নেতা ১৫ লক্ষ টাকা চেয়েছে এই নির্মাণ বৈধ করিয়ে দেওয়ার জন্য।’’

একই পরিস্থিতি শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের বহু পরিচিত গয়ারাম বিল্ডিং নিয়েও। শিলিগুড়ির ছয় নম্বর ওয়ার্ডের উপর তৈরি এই পুরনো বহুতলের পিলার বাঁচিয়ে রেখে শুধুমাত্র দেওয়াল ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে তৈরি হবে বড় মার্কেটিং কমপ্লেক্স। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর তথা দুই নম্বর বোরো কমিটির চেয়ারম্যান আলম খান বলেন, ‘‘অনুমতি কী করে পেল, তা আমার জানা নেই। আমাদের বোরোতে কোন অবজেকশন আসেনি। তবে আমরা খতিয়ে দেখব, তারা কী করে অনুমতি পেল। কোন মাথারা জড়িত আছে, তা-ও দেখতে হবে। এটা সরজমিনে দেখার বিষয়।’’ তবে এ বিষয় নিয়ে বিল্ডিং মালিককে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ।

শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত জায়গাতেই বিষয়গুলো দেখার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। গয়ারাম বিল্ডিং হোক বা যে কোনও নির্মাণই হোক, অনলাইনে যা পদ্ধতি রয়েছে, সেই নিয়মের আওতায় আসতে হবে। আর যেগুলোতে ভাঙার নোটিস হয়েছে, সেগুলো ধীরে ধীরে আমরা ভাঙছি। একবারে সব অবৈধ নির্মাণ ভাঙা সম্ভব নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy