শিলিগুড়ি বিধান মার্কেট। —ফাইল চিত্র।
শিলিগুড়ি বিধান মার্কেটে জমি এবং দোকানের মালিকানার দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ) থেকে পুর দফতর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরেও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তাতে এখনও সুরাহা হয়নি বলে ফের রাস্তায় নামতে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা সোমবার পুর কর্তৃপক্ষকে তাঁদের দাবির বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেন। অন্য দিকে, এসজেডিএ-র সম্মতি ছাড়াই পুরনো দোকান ভেঙে অবৈধ ভাবে ব্যবসায়ীরাই লোহার কাঠামো দিয়ে বেশ কয়েকটি দোকান তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির তরফে এ দিন একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে পরে কথা বলব।’’ জানান, তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী থাকার সময় এই মার্কেটের আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নিয়ে নকশা প্রস্তুত হয়। সেখানে কয়েকশো গাড়ির পার্কিং এবং বহুতল মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ থেকে প্রাথমিক ভাবে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।
এ বছরের গোড়ায়, সৌরভ চক্রবর্তী এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান থাকাকালীন ব্যবসায়ীরা দোকানের মালিকানা নিয়ে আন্দোলনে নামেন। এসজেডিএ-র দফতরে অভিযান করা হয়। ব্যবসায়ীর সংখ্যা, জায়গার পরিমাণ—এ সবের পরিষ্কার তথ্য এসজেডিএ-র কাছে না থাকায় সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়। এসজেডিএ-র তরফে ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দফতর, পুরসভা, এসজেডিএ এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে দল গঠন করে সমীক্ষা হয়। এসজেডিএ-র তরফে জানানো হয়, আদতে ৮.৮৩৬ একর বিধান মার্কেটের জায়গা হলেও, কার্যত প্রায় এক একর জমির হদিস মিলছে না। মার্কেটে ১,৬৫০ জনের দোকান রয়েছে। দাবির বিষয়টি নিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠক করেন সৌরভ। মাস কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সৌরভ চক্রবর্তীকে সরিয়ে চেয়ারপর্সন করা হয় দার্জিলিঙের জেলাশাসক প্রীতি গোয়েলকে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের দাবি নিয়ে ফের সক্রিয় হয়েছে ব্যবসায়ী সমিতি।
বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রাজু দে বলেন, ‘‘আমরা দোকান এবং সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানার দাবি তুলেছি। বিধানচন্দ্র রায় এই মার্কেটের উদ্বোধনের সময় ঘোষণা করেছিলেন ১০ বছর ব্যবসা করার পরে দোকানদারেরা মালিকানা পাবেন। অথচ, আজও তা দেওয়া হল না।’’ এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন, চার-পাঁচ ধরনের চুক্তিতে দোকান দেওয়া হয়েছে ওই মার্কেটে। কাউকে ‘অ্যালটি’ (বরাদ্দকারী) হিসাবে, কাউকে নয় বা এগারো মাসের চুক্তি হিসাবে, কাউকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে। তা নিয়ে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।
মার্কেটের শৌচাগার থেকে নিকাশি সমস্যা নিয়েও সরব ব্যবসায়ীরা। দোকানের চালা ভেঙে বর্ষায় জল পড়লেও, মেরামতি হয় না। বাধ্য হয়ে কিছু দোকানদার নিজেরাই মেরামত করেছেন বলে দাবি। বিধান মার্কেটে একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে অন্তত তিন বার বড় ধরনের আগুন লেগে বহু দোকান পুড়েছে। সম্প্রতি অগ্নি-কাণ্ডে বেশ কিছু দোকান পুড়ে গিয়েছিল। বাজারে পুরনো বৈদ্যুতিক লাইন নিয়ে সমস্যা রয়েছে। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা গড়ার দাবিও উঠেছে। তবে আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ। মার্কেটে পার্কিংয়ের জায়গা না থাকাতেও সমস্যা রয়েছে।
ঘটনাচক্র এ দিনই বিধান মার্কেটে একটি ইলেক্ট্রিকের দোকানে প্রদীপ থেকে আগুন লাগে বলে দাবি। খবর পেয়ে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন পৌঁছয়। দমকলের তৎপরতায় আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। আগুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
অতীতে, বিধান মার্কেটে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে তৎকালীন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ‘আর্থমুভার’ যন্ত্র দিয়ে তা ভেঙেছেন। ফের মাঝেমধ্যেই ব্যবসায়ীরা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ। এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌরভ বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। এখন আমি দায়িত্বে না থাকায় কী অবস্থায় রয়েছে, জানা নেই। অবৈধ নির্মাণ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। এসজেডিএ-র তরফে মার্কেটের নিকাশি, পরিকাঠামো ঠিক করার কাজও মাঝে হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy