তমিজা খাতুন। নিজস্ব চিত্র।
কালিয়াগঞ্জ শহর ছাড়িয়ে ধনকৈল কিসানমান্ডি পেরিয়ে লক্ষ্মীপুর রেলগেট। রেললাইনের পাশ দিয়ে ইটের রাস্তা। হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়। কিছুটা এগোলে মেলে ঢালাই সরু রাস্তা। দু’পাশে কৃষিজমি। ওই রাস্তা ধরে লক্ষ্মীপুরে পৌঁছতেই পুকুরের ধারে অর্ধসমাপ্ত বাড়ি। মাথায় টিনের ছাউনি। ভাঙাচোরা টিনের গেটের পাশে ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পের শৌচালয়। সেটিও অর্ধসমাপ্ত। ওই বাড়ি তমিজা খাতুনের। ২৫ বছর আগে মেয়ের জন্মের মাসখানেক পরেই তমিজাকে ছেড়ে চলে যান তাঁর স্বামী। দিনমজুরি করে দিনে ১০০-১৫০ টাকা রোজগার। তাতেই চলে সংসার। পড়শি-পরিজনদের সাহায্য নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ঝাড়াইয়ের পরে ফেলে দেওয়া অংশ কুড়িয়ে শীতের দুপুরে রোদে শুকিয়ে জ্বালানির জন্য বস্তায় ভরছিলেন।
প্রশ্ন: শৌচালয়ের এমন হাল কেন?
তমিজা: পঞ্চায়েত শৌচালয় তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু তা ব্যবহার করা যায় না। এক দিকে কয়েকটি রিং বসিয়ে ঢাকনা দিয়েছে। পাশে মাটির উপরে একটি রিং বসিয়ে গিয়েছে। শৌচালয় ব্যবহার করতে গেলে টাকা খরচ করে ঠিকঠাক ভাবে তৈরি করতে হবে। টাকা কোথায় পাব। তাই মাঠে গিয়েই শৌচকর্ম করতে হয়।
প্রশ্ন: পঞ্চায়েতে জানাননি?
তমিজা: এক বছর আগে জানিয়েছি। লাভ হয়নি।
প্রশ্ন: বাড়ির কাজও শেষ করেননি কেন?
তমিজা: ২০১৭ সালে পঞ্চায়েত সদস্যকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে সরকারি ঘর পেয়েছি। পর পর দু’বার ৩৫ হাজার টাকা করে ৭০ হাজার টাকায় বাড়ির কাজ করেছি। কিন্তু আর টাকা না মেলায় কাজ শেষ করা যায়নি। কি ছুদিন আগে পঞ্চায়েত থেকে বাড়ির ছবি তুলতে এসে বাকি টাকা দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা চাওয়া হয়। ২০০ টাকা দিই। তবুও বাকি টাকা পাইনি।
প্রশ্ন: নলকূপ নেই?
তমিজা: নলকূপ বসানোর টাকা নেই। পাশের বাড়ি থেকে পানীয় জল নিয়ে আসি।
তমিজার পাশেই সাহিনুর বেগমের বাড়ি। মাটির দেওয়ালের উপর টিনের বেহাল চাল দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে একাধিক বার পলিথিন চেয়েছি। পাইনি।’’ তিনি জানান, লকডাউনে তাঁর স্বামী আমিনুল হক দিল্লিতে আটকে পড়েছিলেন। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেননি। ছোট ছোট তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েন সাহিনুর।
প্রশ্ন: সরকারি কোনও সুযোগ সুবিধা পাননি?
সাহিনুর: পঞ্চায়েত থেকে ত্রাণ না মেলায় ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়েছে। শ্বশুর খসবুল আলি ও শাশুড়ি আমিনা খাতুন আবেদন করেও পাননি বার্ধক্য ভাতা। এ বছর দুয়ারে সরকারে বার্ধক্য ভাতার আবেদন জানিয়েছেন দু’জনে। শাশুড়ির নামে জবকার্ড থাকলেও কয়েক বছর ধরে মেলেনি ১০০ দিনের কাজও। রেশনের চালে গোটা মাস চলে না। খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া রেশনের চালই ১৯ টাকা দরে কিনে খেতে হয়েছে।
প্রশ্ন: সরকারি ঘর পাননি?
সাহিনুর: টাকা না দিলে ঘর পাওয়া যায় না। যাঁরা ১০-২০ হাজার টাকা দিতে পেরেছেন, তাঁরাই সরকারি ঘর পেয়েছেন।
প্রশ্ন: নলকূপ কোথায়?
সাহিনুর: নেই। পঞ্চায়েতে জানিয়েও পাওয়া যায়নি। জলের জন্য গ্রামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের টিউবওয়েলই ভরসা।
প্রশ্ন: শৌচালয়?
উত্তর: তা-ও নেই। মাঠে গিয়ে শৌচকর্ম করতে হয়। পঞ্চায়েতে একাধিক বার বলা হলেও কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
প্রশ্ন: উজ্জ্বলা গ্যাস পেয়েছেন?
সাহিনুর: দু’বার আবেদন করেছিলাম। পাশের গ্রামের এক যুবক উজ্জ্বলা গ্যাস পাইয়ে দেবে বলে দু’বার ৫০ টাকা করে নিয়ে গিয়েছে। আজও গ্যাস মেলেনি।
কালিয়াগঞ্জের যুগ্ম বিডিও ডোমিত লেপচা: ‘‘শৌচালয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ
করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy