মাটির উনুনেই রান্না। নিজস্ব চিত্র।
আঁকাবাঁকা গ্রামীণ পথ। পথে বিছিয়ে কুচি পাথর। উধাও পিচের আস্তরণ। পথের দু’ধারে সর্ষের জমি। মনে হচ্ছে জমিতে যেন ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে হলদে রঙ। ছবির মতো জমি টপকে চার কিলোমিটার পথ পেরোতেই রাস্তার দু’পাশে সারি সারি মাটির বাড়ি। পাশ দিয়ে কংক্রিটের রাস্তাটি গিয়েছে হবিবপুর ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত আইহো গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী প্রধান গ্রাম দমদমায়। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে মাটির গাঁথনির উপরে টিনের ছাউনি দেওয়া কুঁড়ে ঘর। সেই বাড়ির উঠোনে ত্রিপল দিয়ে ঘিরে উননে শুকনো গাছের পাতা দিয়ে রান্নায় ব্যস্ত লক্ষ্মী বেসরা। উনুনের ধোঁয়ায় চোখে জল লক্ষ্মীর একরত্তি মেয়ে দিবিয়া সোরেনের।
প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস কোথায়?
লক্ষ্মী: আমরা আদিবাসী, কিছুই পাব না। প্রধানমন্ত্রীর দলের লোক আমাদের গ্রামের সদস্য। কই কখনও তো বলেইনি, গ্যাস পাব আমরা।
প্রশ্ন: লকডাউনে সংসার চলল কী ভাবে?
লক্ষ্মী: পরিবারের পাঁচজন সদস্য রয়েছি। রেশনে বিনামূল্যে মাসে চাল ২৪ কেজি, গম ২০ কেজি এবং আটা ১৮ কেজি পেয়েছি। তাই দিয়েই সংসার চলেছে।
প্রশ্ন: আর ১০০ দিনের কাজ?
লক্ষ্মী: সরকারি মাটি টাকার কাজ পেয়েছি ১৭ দিন।
প্রশ্ন: বাড়ি তো ভেঙে পড়ছে?
লক্ষ্মী: চার বছর আগে ঘর দেবে বলে নাম নিয়ে গিয়েছে। এখনও ঘর পাইনি। মাটির বাড়িতেই বসবাস করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: শৌচাগার?
লক্ষ্মী: ছোট একটা শৌচাগার পেয়েছিলাম ঠিকই। তবে মাটির দেওয়াল ধসে শৌচাগার ভেঙে যায়। তারপর থেকে মেরামত করতে পারেনি। টাকা কোথায়।
লক্ষ্মীর বাড়ির পাশেই শীতের সকালে রোদে বসে মুড়ি খাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব মহিলা বালকি কর্মকার। শৌচাগারের কথা শুনেই উঠে এসে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমি কি এবারে শৌচাগারের টাকা পাব?’’
প্রশ্ন: শৌচাগার নেই?
বালকি: প্যান দিয়ে গিয়েছে। ইট, সিমেন্ট, টিন কিছুই দেয়নি।
প্রশ্ন: খোঁজ করেননি?
বালকি: আমার অ্যাকাউন্টে সাত হাজার টাকা এসেছে। সেই টাকা তুলে নেতাকে দিয়ে এসেছিলাম।
প্রশ্ন: তার পর?
বালকি: তারপর আর কী? বাড়িতে প্যানটাই পড়ে রয়েছে।
দমদমা বুথে প্রায় ১২০০ ভোটার। বেশিরভাগই মাটির বাড়ি। পানীয় জলের তিনটি পাম্পের মধ্যে একটি অকেজো। বিদ্যুতের খুঁটিতে আলো নেই, তাই সন্ধের পর সব অন্ধকার। পরিষেবা কিছুই মিলছে না বলে এগিয়ে এলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব সান্ত্বনা মার্ডি।
প্রশ্ন: দুয়ারে সরকারে সব জানাচ্ছেন না কেন?
সান্ত্বনা: শুনেছি দুয়ারে দুয়ারে সরকার যাচ্ছে। আমাদের গ্রামে তো সরকার আসেনি।
প্রশ্ন: জয় জোহার প্রকল্প সম্পর্কে জানেন?
সান্ত্বনা: সেটা আবার কী? আমরা মাঠে-ঘাটে কাজ করা মানুষ। সরকারের তো উচিত আমাদের গ্রামে এসেও প্রচার করা। যেমন ভোটের সময় নেতা গ্রামে আসেন।
প্রশ্ন: মাঝির থান?
সান্ত্বনা: গ্রামবাসীরা মিলে একটা মাটি দিয়ে মাঝির থান করেছি। সেখানেই পুজো করি। কিন্তু সরকার থেকে মাঝির থান করে দেয়নি।
গ্রামবাসীদের ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য অহল্যা কর্মকার।
প্রশ্ন: গ্রামবাসীদের তো অনেক ক্ষোভ। সব বাড়িই তো মাটির?
অহল্যা: আমার বাড়িও মাটিরই রয়েছে। গ্রামের সবার পাকা বাড়ির জন্য নামের তালিকা তৈরি করেছি। সেই তালিকা পঞ্চায়েতে জমাও দিয়েছি। বাস্তবে কিছুই হয়নি। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত স্বজনপোষণ করে নিজেদের পরিবারের লোকেদের ঘর পাইয়ে দিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy