—প্রতীকী চিত্র।
টিকিট নয়, দলের ব্যাজই যেন যথেষ্ট। তা বুকে ঝুলিয়ে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার একাধিক রেল স্টেশনে বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতাগামী বিভিন্ন ট্রেনের কামরা ‘দখল’ করার অভিযোগ উঠতে শুরু করল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। বুকে ব্যাজ ঝুলিয়ে ট্রেনের কামরায় ওঠা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের গন্তব্য কলকাতা। উপলক্ষ ২১ জুলাইয়ের দলীয় সমাবেশ। ট্রেনে টিকিট না কাটার কারণ হিসাবে যাঁদের কারও কারও বক্তব্য, ‘‘বুকে ঝোলানো ব্যাজে দিদির (দলের শীর্ষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ছবি রয়েছে। তা হলে আবার টিকিট কেন?’’
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, “বিনা টিকিটে কলকাতাগামী ট্রেনে এ দিন অনেকে চেপেছেন বলে আমাদের কাছেও খবর এসেছে। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে আরপিএফ ও ট্রেনের টিকিট পরীক্ষকদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” তবে বিনা টিকিটে সংরক্ষিত কামরায় চড়ায় কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, রাতেও তা জানাতে পারেননি রেল-কর্তারা।
নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেসে কলকাতায় রওনা দেওয়া দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীকে এ দিন বলতে শোনা যায়, “আপনারা সবাই দিদির ডাকে ধর্মতলায় যাচ্ছেন। সুশৃঙ্খল ভাবে যান। রেল যদি কোথাও কাউকে বাধা দেয়, তা হলে বুকে থাকা ব্যাজ দেখিয়ে বলবেন, ‘দিদির ডাকে ধর্মতলায় যাচ্ছি’। তার পরেও রেল বাধা দিলে আমাদের ফোন করবেন।” তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস ছাড়ার পরে সৌরভ দাবি করেন, “দলের বেশিরভাগ কর্মী-সমর্থকই ট্রেনের টিকিট কেটে কলকাতায় যাচ্ছেন। যাঁদের টিকিট কাটার সামর্থ্য নেই, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবে জেনারেল কামরায় চেপেছেন।”
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকও বলেন, ‘‘জেলা থেকে অনেকেই টিকিট কেটে কলকাতার কর্মসূচিতে যাচ্ছেন। অনেকে আবার বিজেপি, সিপিএমের লোকেরা যে ভাবে তাঁদের কর্মসূচিতে যান, সে ভাবেও যাচ্ছেন।’’ তবে সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, "বিনা টিকিটে যাওয়া তৃণমূলের সংস্কৃতি। আমাদের লোকেরা আগে টিকিট কেটে নেন।" বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, ‘‘আমাদের কর্মসূচি থাকলে স্পেশাল ট্রেন ভাড়া করা হয়, যাতে যাত্রীদের অসুবিধে না হয়। তৃণমূল সে সব নিয়ে ভাবে না। কামরা দখল করে ওরা ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে।"
নেতাদের কথার প্রতিধ্বনি ছিল তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের কথাতেও। এ দিনই কলকাতায় রওনা দেওয়া আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া মাঝেরডাবরির শিবকাটা এলাকার বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী গোপাল বিশ্বাসের দাবি, ‘‘প্রতি বছর বিনা টিকিটেই ট্রেনে উঠে ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে কলকাতায় যাই। এ বারও সে ভাবেই যাচ্ছি।” আরও এক ধাপ এগিয়ে কামাখ্যাগুড়ির তৃণমূল কর্মী নীরেন রায় বলেন, “বুকে লাগানো দলের ব্যাজে দিদির ছবি রয়েছে। ওটাই টিকিট। রেলের টিকিট পরীক্ষক এলে ব্যাজ দেখিয়ে দেব।”
কিন্তু এতে তো ট্রেনের সাধারণ যাত্রীদের সমস্যা হবে? তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চক্রবর্তী বলেন, “বৈধ টিকিট ছাড়া, ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা কেউ ওঠেননি।” অনুপ জানিয়েছেন, বিকেলে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন থেকে পদাতিক এক্সপ্রেস ছাড়ার সময় সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়া কয়েক জন কর্মীকে নামিয়ে তাঁদের জেনারেল কামরায় তুলে দেওয়া হয়। তবে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ তথা দলের জেলা সভাপতি মনোজ টিগ্গা বলেন, “গোটা তৃণমূল দলটাই দাদাগিরির উপরে চলছে। তৃণমূলের বড় নেতারা তাঁদের কর্মী-সমর্থকদেরও দাদাগিরি করতে উৎসাহিত করছেন। ফলে, টিকিট ছাড়াই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয় ব্যাজ বুকে ঝুলিয়ে ট্রেনে চেপেছেন। আর দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নিয়ম মেনে টিকিট কেটে ট্রেনে চাপা যাত্রীদের।”
এ দিন নিউ কোচবিহার, মাথাভাঙা, ঘোকসাডাঙা, দিনহাটা, বামনহাট-সহ কোচবিহার জেলার বিভিন্ন স্টেশন থেকেও কলকাতাগামী ট্রেনে ওঠেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, তাঁদের অনেকেই টিকিই না কেটে শুধু দলের ব্যাজ লাগিয়ে ট্রেনে ওঠেন। এ দিন উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে তৃণমূল কর্মীদের অধিকাংশই সংরক্ষিত স্লিপার ক্লাসের আসনে বসে রওনা দেন বলে অভিযোগ। কলকাতায় যাওয়ার জন্য এ দিন দিনহাটা স্টেশন থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ট্রেনের এস-৪ সংরক্ষিত কামরায় ওঠেন সুদর্শন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনে উঠে দেখি, অধিকাংশ আসনই দখল হয়ে রয়েছে। আমি আমার সিটে বসতে পারলেও জানি না শেষ পর্যন্ত কতটা ঠিকঠাক ভাবে যেতে পারব।’’ তৃণমূলের দিনহাটা শহর ব্লক সভাপতি বিশু ধর বলেন, ‘‘ধর্মতলার সভায় যোগ দেওয়ার জন্য কর্মীরা নিজেরাই যে যার মতো আগে থেকেই টিকিট কেটেছেন।’’
আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকের মাদারিহাট থেকেও এ দিন তৃণমূল কর্মীরা কলকাতায় রওনা দেন। নেতৃত্বে ছিলেন আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ দীপনারায়ণ সিনহা। কলকাতায় যান ফালাকাটা ব্লকের তৃণমূল কর্মীরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy